
গত বছরের ৩০ জুলাই সরকারের ঘোষিত ‘রাষ্ট্রীয় শোক দিবস’ প্রত্যাখ্যান করে “লাল কাপড়” ও “লাল প্রোফাইল” কর্মসূচি দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। কিন্তু এই কর্মসূচির উদ্যোক্তা কে ছিলেন—তা নিয়ে এখন চলছে তীব্র বিতর্ক ও মতভেদ।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি সাদিক কায়েম এবং এস এম ফরহাদ (বর্তমান সভাপতি) ছিলেন এই ‘সফট প্রোটেস্ট’-এর মূল পরিকল্পনাকারী।

তাদের টেলিগ্রাম গ্রুপের কথোপকথন, প্রেস রিলিজের খসড়া ও হ্যাশট্যাগ প্রস্তাব—সব মিলিয়ে উঠে আসে, ‘লাল কাপড় মুখে ও চোখে বাঁধা’ কর্মসূচি আসলে ঢাবি শিবিরের মাথা থেকেই এসেছে।
তাদের টেলিগ্রাম গ্রুপের কথোপকথন, প্রেস রিলিজের খসড়া ও হ্যাশট্যাগ প্রস্তাব—সব মিলিয়ে উঠে আসে, ‘লাল কাপড় মুখে ও চোখে বাঁধা’ কর্মসূচি আসলে ঢাবি শিবিরের মাথা থেকেই এসেছে।
শিবিরের ‘২০২৪’ টেলিগ্রাম গ্রুপ থেকেই শুরু
২৯ জুলাই রাত ৮টা ৩০ মিনিটে ‘২০২৪’ টেলিগ্রাম গ্রুপে প্রথম আলোচনা হয় কালো কাপড় বাঁধা নিয়ে। এরপর এস এম ফরহাদ প্রস্তাব দেন, কালো নয়—লাল কাপড় দিয়ে প্রতিবাদ করা যাক।
ফরহাদ লেখেন, “সরকারের অপজিট হিসেবে কালকে লাল পতাকা/কাপড় দিতে পারেন; রক্তকে লাল দিয়ে বুঝাবে।”
এই প্রস্তাবে সাদিক কায়েম, ফরহাদ ও মহিউদ্দিন তিনজন সম্মত হয়ে প্রস্তুত করেন একটি প্রেস রিলিজ এবং হ্যাশট্যাগের তালিকা। ওই হ্যাশট্যাগগুলো (#RedForJustice, #StudentsInRed, #JusticeInRed ইত্যাদি) পরদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অফিসিয়াল টেলিগ্রাম চ্যানেলে হুবহু ব্যবহৃত হয়।

কে আগে প্রস্তাব দিলেন?
বিএনপিপন্থী ছাত্রদল বা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অনেকেই দাবি করছেন, লাল কাপড় ধারণ বা প্রোফাইল লাল করার চিন্তা এসেছিল ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির, ছাত্রশক্তির নুরুল ইসলাম নাহিদ কিংবা আন্দোলনকারীদের নিজস্ব আলোচনা থেকে।
তবে যাচাই করা স্ক্রিনশট ও বার্তায় দেখা যায়, প্রস্তাব, পরিকল্পনা ও প্রচারণা—সবকিছুর সূচনায় শিবির নেতৃত্বই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষ থেকে এক পর্যায়ে স্বীকার করা হয়, শিবির থেকে দেওয়া হ্যাশট্যাগগুলো তারা গ্রহণ করে ব্যবহার করেছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দুই ধারা?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ‘লাল কাপড়’ প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে জনপ্রিয়তা পেলেও এর পরিকল্পনায় ছাত্রশিবিরের অংশগ্রহণকে অস্বীকার করা যাচ্ছে না।
আন্দোলনের অনেকেই পরবর্তীতে মাঠের কর্মসূচি ও অনলাইন একটিভিজমে একযোগে যুক্ত হয়।
তবে ‘প্রথম ভাবনাটা কার’—এই বিতর্কে ছাত্রশক্তি ও ছাত্রদল নিজেদের ভূমিকা প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে, আবার শিবির পক্ষ বলছে, এই কর্মসূচিকে তারা ‘জাতীয় প্রতীকী প্রতিবাদে’ রূপ দিয়েছিল।
এক কর্মসূচি, নানা দাবিদার
এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এত বিতর্ক ও মালিকানা দাবি প্রমাণ করে—ছাত্ররাজনীতির প্রেক্ষাপটে প্রতীকী প্রতিবাদের কৌশল কতটা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
শিবিরের এক নেতার ভাষায়, “তারা কালো দিয়েছে, আমরা লাল দিলাম—রক্তের প্রতীক দিয়ে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করলাম।”
আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট—এই আন্দোলনের পেছনে কৌশলগতভাবে সক্রিয় ছিল ছাত্রশিবির।
যদিও পরে এটিকে বিভিন্ন সংগঠন জনপ্রিয় করে তোলে এবং একধরনের ‘অর্গানিক ট্রেন্ডে’ রূপ দেয়।
লাল কাপড় আন্দোলন কার—এই প্রশ্নের উত্তর যেমন রাজনৈতিক, তেমনি মনস্তাত্ত্বিক।
তবে দলীয় পরিচয় যাই হোক, এই কর্মসূচি রাষ্ট্রীয় শোক দিবসের পাল্টা এক প্রতিবাদী ভাষা হিসেবে ইতিমধ্যে জায়গা করে নিয়েছে সাধারণ ছাত্রজনতার হৃদয়ে।