সাত দফা দাবিতে আগামী শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ঐতিহাসিক ভেন্যুটিতে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই সমাবেশে দলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জমায়েত ঘটাতে চায় দলটি।
আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন দাবি উপস্থাপনের পাশাপাশি দলীয় শোডাউনের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশের নেতাকর্মীরা।
এ সমাবেশ সফলে কয়েক সপ্তাহ ধরে তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক গণসংযোগ, প্রচার-মিছিলসহ দফায় দফায় বৈঠক করছেন দায়িত্বশীল নেতারা। এরই মধ্যে অত্যাধুনিক মঞ্চ তৈরিসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানা গেছে।
দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, যেসব দাবিতে এই সমাবেশ ডাকা হয়েছে, তা মূলত আগামী নির্বাচন ঘিরে গণমানুষের দাবি। তাই দলীয় এই সমাবেশকে জাতীয় সমাবেশ আখ্যায়িত করা হয়েছে। জামায়াতের সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছেÑসব গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, প্রবাসীদের ভোট প্রদানের ব্যবস্থা এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ।
সমাবেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল এবং শীর্ষ আলেম-ওলামাদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। তবে আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য জোটের প্রত্যাশায় ইসলামি দলগুলোকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে বলেও জানা গেছে।
দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দেশের সাধারণ জনগণও শনিবারের সমাবেশে যোগ দেবেন বলে সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা। তবে এ সমাবেশ সফলে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াত নেতাকর্মীরা। এছাড়া আশপাশের জেলাগুলো থেকেও নেতাকর্মীদের বেশ অংশগ্রহণ থাকবে।
সমাবেশের সর্বশেষ প্রস্তুতি সম্পর্কে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন আমার দেশকে বলেন, সমাবেশের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। ঢাকাসহ সারা দেশে প্রচার চলছে। ব্যাপক পোস্টারিং, লিফলেট বিতরণ, ব্যানার-ফেস্টুন টানানো হয়েছে। ঢাকার বড় সড়কগুলোয় তোরণ নির্মাণ করা হচ্ছে। নগরীর পাড়া-মহল্লা, থানা-ওয়ার্ডে প্রস্তুতি মিটিং-মিছিল চলছে।
তিনি জানান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটি ছাড়াও বেশ কিছুসংখ্যক উপকমিটি কাজ চালাচ্ছে। সার্বিক বিষয় তদারকি করছেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা ছাড়াও দলীয় কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও রাজধানীর সর্বত্র নিয়োজিত থাকবেন। ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশ থেকে ব্যাপক জনসমাগমের প্রত্যাশা রয়েছে তাদের। দুপুর ২টা থেকে আসর পর্যন্ত এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি ও ইসলামি দলগুলোর সমন্বয়ক ড. খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, ৫ আগস্ট-পরবর্তী জামায়াত আমিরের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে দেশের সব ঘরানার শীর্ষ আলেমরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ইসলামপন্থিদের ভোট এক বাক্সে দেওয়ার আওয়াজ ওঠে। সেই আওয়াজ এখন গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। আগামী শনিবার জাতীয় সমাবেশে আলেম-ওলামাদের উপস্থিতির মধ্য দিয়ে সেই দাবির প্রতিফলন ঘটবে। তবে এ উদ্যোগে কেউ ষড়যন্ত্র করলে তাদের পরিণতি আওয়ামী সুবিধাভোগী দরবারি আলেমদের মতো হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জাতীয় সমাবেশ সফলের আহ্বান গোলাম পরওয়ারের
১৯ জুলাই ‘জাতীয় সমাবেশ’সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
গতকাল মঙ্গলবার সমাবেশ সফল ও সুশৃঙ্খলভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে গঠিত বাস্তবায়ন কমিটির এক বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
সকাল ১০টায় মগবাজারে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দলের সংশ্লিষ্ট নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জাতীয় সমাবেশ অনুষ্ঠানের সর্বাত্মক প্রস্তুতির অগ্রগতি পর্যালোচনা করে ৫ দফা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেগুলো হচ্ছেÑসমাবেশের মঞ্চ প্রস্তুতি, মাইকিং, ব্যানার ও ডিজিটাল ডিসপ্লেসহ যাবতীয় কারিগরি প্রস্তুতি ১৮ জুলাইয়ের পূর্বেই সম্পন্ন করতে হবে; স্বেচ্ছাসেবক দলকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে মাঠ পর্যায়ে মোতায়েন করা হবে এবং তারা আগত জনসাধারণকে সার্বিক সহযোগিতা করবে; অংশগ্রহণকারীদের আসন ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, স্যানিটেশন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা এবং পর্যাপ্ত প্রবেশ ও নির্গমন পথ নিশ্চিত করা হবে; ট্রাফিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করা হবে এবং গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমাবেশের বার্তা ছড়িয়ে দিতে মিডিয়া উপকমিটিকে আরো সক্রিয়ভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এ সময় অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ছাত্র-জনতার বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থান জাতীয় জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জুলাই-আগস্টের জনআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন এবং জীবন উৎসর্গকারী ছাত্র-জনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী এ সমাবেশের আয়োজন করেছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় অনুপ্রাণিত হয়ে দেশপ্রেমিক জনগণকে ব্যাপকভাবে জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে অংশগ্রহণ করার জন্য আমি সংগঠনের সর্বস্তরের জনশক্তি ও দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
এর আগে গত ৮ জুলাই সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। ঘোষিত ৭ দফা আদায়ের মাধ্যমেই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সফলতা অর্জন করা সম্ভব বলে তিনি বৈঠকে অভিমত ব্যক্ত করেন।
এদিকে জাতীয় সমাবেশ সফলে নিরাপত্তা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গত মঙ্গলবার দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন জামায়াত নেতারা।
বিকালে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল এ সময় উপস্থিত ছিল। অন্যদিকে ডিএমপির পক্ষ থেকে সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইমস অ্যান্ড অপারেশন) নজরুল ইসলাম।
এ সময় জাতীয় সমাবেশ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চান জামায়াত নেতারা। এ জন্য দলীয় ৬ হাজারের মতো স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে পুলিশ সদস্যরা কাজ করবেন বলে বৈঠকে জানানো হয়। বৈঠক শেষে জামায়াত নেতা এহসানুল মাহবুব জুবায়ের সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
সমাবেশ সফলের আহ্বান জানিয়ে ধারাবাহিক প্রচারের অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মিছিল করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াত। এতে দলের মহানগর নেতারা অংশগ্রহণ করেন।