স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। কিন্তু গত সাড়ে ১৫ বছর প্রেসক্লাব ছিল ফ্যাসিবাদের হাতে জিম্মি। তারা স্বৈরাচার হাসিনার পক্ষে শুধু ভূমিকাই রাখেনি, বরং হাসিনাকে স্বৈরাচার হয়ে উঠতে সহযোগীতা করেছে। যখন সারাদেশে গণহত্যা চলছিল সে সময় প্রেসক্লাবের সাংবাদিক নেতারা উস্কে দিয়েছিল শেখ হাসিনাকে। অবশেষে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যূত্থানে স্বৈরাচার হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার দোসরের ভূমিকা পালন করা প্রেসক্লাবের দায়িত্বশীলরাও সবাই পালিয়েছে বা পালাতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে।
স্বৈরাচারের পতনের পর নতুন বাংলাদেশে প্রেসক্লাব ফ্যাসিবাদ মুক্ত হবে এটাই সবার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু প্রেসক্লাবের সাম্প্রতিক কর্মকান্ডে সেই প্রত্যাশা কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আগামীকাল ৩১ জুলাই ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আলোচনা সভা, আলোকচিত্র ও ভিডিও প্রদর্শনী এবং শহীদ সাংবাদিকদের স্মরণে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সেই অনুষ্ঠানে অতিথি রাখা হয়েছে শুধু বিএনপির নেতাদের। গণঅভ্যূত্থানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা জামায়াত, এনসিপিসহ অন্য কোনো দল থেকে কাউকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা সংগঠন জুলাই ঐক্য।
স্বৈরাচারের দোসররা পালিয়ে যাওয়ার পর প্রেসক্লাবের নতুন সভাপতি হয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ। ৫ আগস্টের পর পেশাদার সাংবাদিকদের পাশাপাশি বিএনপিপন্থি কয়েকশ অপেশাদার সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সদস্য পদ দিয়ে সর্বপ্রথম বিতর্কের জন্ম দেয় প্রেসক্লাব।
এরপর একে একে আরও বিতর্কের জন্ম দেয় জাতীর বিবেক সাংবাদিক সমাজের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানটি। ৫ আগস্টের পর এই প্রেসক্লাবে বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের অনুষ্ঠান থেকে মুজিববাদের স্লোগান দেওয়া হয়েছে। এই প্রেসক্লাব বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে।
বিশিষ্টজনরা বলছেন, প্রেসক্লাব কি অন্য সবাইকে মাইনাস করার মাধ্যমে নতুন কোনো ফ্যাসিস্টের জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করছে? প্রেসক্লাবের মতো জাতীয় একটি জায়গায় যদি আবারও একদলীয় নিয়ন্ত্রণ শুরু হয় তাহলে গণমাধ্যম নতুন আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম দিবে৷ অবিলম্বে জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যানারে একদলীয় রাজনৈতিক অনুষ্ঠান বন্ধ করার আহ্বান জানান তারা।