চাঁদপুর-৬ (ফরিদগঞ্জ) নির্বাচনি আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও গত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ একতরফা, রাতের ভোট এবং ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করে আসনটি দখলে নেয়।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পলাতক ও আত্মগোপনে রয়েছে। ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে এখানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও অপরাপর আওয়ামীবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে বিএনপি অর্ধডজনের বেশি সম্ভাব্য প্রার্থী, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের একক প্রার্থী গণসংযোগ করছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করছেন। প্রায় প্রতিদিন হাটেবাজারে, মাঠে বিভিন্ন জনসমাগমে ভোটারদের সামনে তারা নিজেকে তুলে ধরতে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
জামায়াতে ইসলামী ও অন্য ইসলামি দলের প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে আগামী নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ ও আমেজ দেখা গেলেও এ আসনে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী নেতাকর্মীদের চোখেমুখে হতাশা আর দুশ্চিন্তা কাজ করছে। কারণ, এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি কোনো কোনো নেতার বক্তৃতা-বিবৃতি ও উত্তেজনাকর কথাবার্তায় মনে হচ্ছে তারা কাউকে ছাড় দেবেন না। তাদের এ ধরনের বক্তব্য-বিবৃতি বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের জন্য দুশ্চিন্তা ও হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর তাই এবার জামায়াতে ইসলামী ফরিদগঞ্জ আসনটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন।
ফরিদগঞ্জ আসনে যারা বিএনপির মনোনয়ন চাচ্ছেন তারা হলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির রাজস্ব ও ব্যাকিং বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি লায়ন মো. হারুনুর রশীদ, ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও শিল্পপতি এমএ হান্নান, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ মোতাহার হোসেন পাটোয়ারী, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শরীফ মোহাম্মদ ইউনুছ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রফিক, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা রিয়াজ উদ্দিন নসু, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা ফেরদৌস পাটওয়ারী ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক নেতা এসএম মিজানুর রহমান। এ আসনে তারা নিজ নিজ বলয় তৈরি করে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। তাছাড়া সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য লায়ন হারুনুর রশিদ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনের বিএনপির প্রার্থী হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাংবাদিক শফিকুর রহমানকে পরাজিত করে ছিলেন। তিনি বলেন, নেতাকর্মীরা যখন ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন তখন তাদের পাশে ছিলেন। বিভিন্ন সময় অসহায় মানুষের পাশে থেকে দলের জন্য কাজ করেছেন। তার বিশ্বাস বিএনপির তাকে মূল্যায়ন করে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দিবে।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও শিল্পপতি এমএ হান্নান উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপির কমিটি করছেন। এমএ হান্নান আমার দেশকে বলেন, বিগত দুটি সংসদ নির্বাচনে তাকে দল থেকে মনোনয়ন দিয়েছিল। তার দাবি, কারো প্ররোচণায় ঋণখেলাপির মামলার অভিযোগে দুবারই তার মনোনয়ন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। অতীতের ন্যায় এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে জানান।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোতাহার হোসেন পাটোয়ারী বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ আমলে ফরিদগঞ্জে সবসময় নেতাকর্মীদের পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন। তিনিও দলের মনোয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
অপর সম্ভাব্য প্রার্থী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শরীফ মোহাম্মদ ইউনুছও এবার বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ফরিদগঞ্জে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।
অপরদিকে, জামায়াতে ইসলামী দলের চাঁদপুর জেলা আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মাওলানা মো. বিল্লাল হোসেন মিয়াজীকে একক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। দলের নেতাকর্মীদের ধারণা সঠিক, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তারা এই আসনে বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। তাদের ধারণা, ধর্মপরায়ণ এ এলাকার জনগণ তথা ভোটাররা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে রায় দিবে।
ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন গত কয়েকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের দলীয় প্রতীক হাতপাখা নিয়ে নির্বাচন করছেন শায়খুল হাদীস আল্লামা মুকবুল আহমেদ। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনিই দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচার-প্রচারণায় তিনি ব্যস্ত সময় পার করছেন। নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই উপজেলায় নতুন সাংগঠনিক পরিষদ ঘোষণা করলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে প্রার্থী হবেন তা এখনো চূড়ান্ত করেনি। গণঅধিকার পরিষদের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় কোনো কমিটি নেই এবং এর কোনো কার্যক্রম এখনো দেখা যায়নি।