গাজীপুর মহানগরীর সদর মেট্রো থানার কাছে প্রকাশ্যে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে এক সাংবাদিককে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা আ ক ম মোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আ ক ম মোফাজ্জল হোসেন জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। গতকাল বুধবার (৬ আগস্ট) বিকেল ৫টার দিকে গাজীপুর সদর মেট্রো থানার কাছে এ ঘটনা ঘটলেও ঘটনার একটি ভিডিও আজ বৃহস্পতিবার ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, সাংবাদিক বাঁচার জন্য আকুতি জানালেও বিএনপি নেতা মোফাজ্জলের ক্যাডারদের মন গলেনি। এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
হামলার শিকার সাংবাদিকের নাম আনোয়ার হোসেন। তিনি দৈনিক বাংলাদেশের আলো নামে একটি পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি বলে জানা গেছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, গাজীপুর মহানগরীর জয়দেবপুর রেললাইনের উত্তর পাশে ফলের দোকানগুলোর সামনের রাস্তায় এক যুবককে বিএনপি কর্মীরা মারতে মারতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ লাঠি দিয়ে আঘাত করছে, কেউ লাথি মারছে। একপর্যায়ে ইট দিয়ে আঘাত করে সাংবাদিকের পা ও শরীর থেঁতলে দেয় তারা। হামলাকারীরা মারধরের পাশাপাশি তার বুকের ওপর উঠে লাফায়। এ ঘটনা পুরান ঢাকার নৃশংস পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে দেওয়ার ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
ফুটেজে দেখা যায়, এ সময় পুলিশ উপস্থিত থাকলেও প্রথম দিকে তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পরে ইট দিয়ে পা থেঁতলে দেওয়ার পর একজন পুলিশ সদস্য এগিয়ে যান।
মারধরের পর তাকে উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।
হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আনোয়ার হোসেনের পায়ে মারাত্মক জখম হয়েছে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় আনোয়ার হোসেনের মা আনোয়ারা বাদী হয়ে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে সদর মেট্রো থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিকের সহকর্মী তমা বলেন, আ ক ম মোফাজ্জল হোসেনের চাঁদাবাজি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী আনোয়ার। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বুধবার সন্ধ্যায় মোফাজ্জল হোসেনের অনুসারী স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের উপস্থিতিতে তার উপর হামলা চালায়। তাকে পুলিশের সহায়তায় আমরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে তার স্বজনরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। তার অবস্থা গুরুতর।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) তাহেরুল হক চৌহান বলেন, ‘একজন পুলিশ কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি পাঠানোর পর তিনি দেখেছেন। এ ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। হামলার শিকার ব্যক্তির বিরুদ্ধে কারও কোনো অভিযোগ থাকলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব। কিন্তু এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অভিযুক্তদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’