ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম মেঘালয়ের খাসি হিলস এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী পাঁচ বাংলাদেশিকে আটক করেছে। তারা গত শনিবার ও রোববার (১০ আগস্ট) গ্রেপ্তার হন।
আটক ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন নিজেদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মী বলে দাবি করেছেন এবং একজন নিজেকে পুলিশ সদস্য পরিচয় দিয়েছেন। তাদের মধ্যে চারজনকে স্থানীয় জনসাধারণ ও পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার কয়েকটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
সেই ভিডিওতে স্থানীয়দের বলতে শোনা যায়, আটক ব্যক্তিরা ওই গ্রামে ডাকাতি ও অপহরণের চেষ্টা চালান।
ভিডিওতে দেখা গেছে, হিন্দি ভাষায় জিজ্ঞাসাবাদের সময় একজন বলছেন, ‘আমরা শেখ হাসিনার দল করতাম। এখানে অবৈধ সরকার এসেছে। তখন আমাদের রাস্তা দেখিয়ে এখানে নিয়ে এসেছে। আমাদের বাংলাদেশে নিরাপত্তা আছে…’ এরপর বেশ কিছু কথাবার্তা স্পষ্ট শোনা যায়নি।
ভারতীয় সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ) ও মেঘালয় পুলিশের যৌথ অভিযানে আটক চার বাংলাদেশির ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিম খাসি হিলে এক যুবকের ওপর হামলার ঘটনায় চার বাংলাদেশিকে হিন্দিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ভিডিওতে তিনজনের হাত বাঁধা এবং তারা হাফ প্যান্ট পরিহিত। একজনের গায়ে ছেঁড়া গেঞ্জি ছিল, বাকি দুজনের গায়ে শার্ট ছিল না। শারীরিক নির্যাতনের বিষয়টিও স্পষ্ট। অন্য ভিডিওতে তাদের পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকশ’ জন লোক বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে।
ভারতের গণমাধ্যম ‘শিলং টাইমস’সহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে মেঘালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম খাসি হিলসের রংদাংগাই গ্রামের এক যুবকের ওপর হামলা, অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় গত শনিবার চার বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তারা তিন জন নিজেদের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। হামলার ঘটনা গত শুক্রবার, ৮ আগস্ট সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী রংদাংগাই গ্রামে ঘটে। রোববার আরও একজন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শনিবার আটক চারজন হলেন জামালপুর জেলার জাহাঙ্গীর আলম (২৫), মারুফুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ জেলার সায়েন হোসেন এবং কুমিল্লার মাহফুজ রহমান। তাদের মধ্যে মারুফুর রহমান নিজেকে পুলিশ সদস্য হিসেবে দাবি করেছেন। রোববার আটক ব্যক্তি মোবারক মিয়া, তিনি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার কলাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা।
মেঘালয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) বি. জিরওয়া জানান, গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় রোববার সকালে গিলাগোড়া গ্রামের কাছাকাছি খোঞ্জয় এলাকায় মোবারক মিয়াকে আটক করা হয়।
শিলং টাইমস অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, শুক্রবার (৮ আগস্ট) সন্দেহভাজন বাংলাদেশি সশস্ত্র অপরাধী দল রংদাংগাই গ্রামের ২১ বছর বয়সী বলসরাং এ. মারাকের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে অপহরণ করে। এরপর পুলিশ, বিএসএফ ও স্থানীয় বাসিন্দারা সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে শনিবার চার জনকে গ্রেপ্তার করে।
তাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। খোঞ্জয় গ্রামের বাসিন্দারা প্রথম অভিযুক্তকে আটক করে, এবং পুলিশ-বিএসএফ যৌথ অভিযানে বাকিদের গ্রেপ্তার করে।
এদিকে মেঘালয়ের ‘হাইল্যান্ড পোস্ট’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযানে ঘটনাস্থল থেকে বাংলাদেশের পুলিশ কনস্টেবলের একটি আইডি কার্ড, হাতকড়া, ম্যাগাজিনের কভার, পিস্তল হোলস্টার, রেডিও সেট, মোবাইল ফোন, মুখোশ, কুঠার, তার কাটার যন্ত্র ও বাংলাদেশি মুদ্রা জব্দ করেছে মেঘালয়ের পুলিশ।