ভারতের ৭৯তম স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ১২তম ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশবাসীর জন্য দিলেন দ্বিগুণ বার্তা। অর্থনীতিতে স্বস্তি আনার প্রতিশ্রুতি এবং সীমান্তে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার সংকল্প।
শুক্রবার সকালে প্রায় পৌনে ২ ঘণ্টার ভাষণে একদিকে দীপাবলির আগে জিএসটি সরলীকরণের ঘোষণা, অন্যদিকে কাশ্মীরের পেহেলগাম হত্যাকাণ্ড ও ‘অপারেশন সিঁদুর’র প্রসঙ্গ টেনে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা শোনালেন তিনি। ক্ষীপ্র কণ্ঠে বললেন, ভারতের পানির ওপর অধিকার শুধু ভারত এবং তার কৃষকদের।
মোদির ভাষণের শুরুতেই এদিন উঠে এলো অর্থনীতির প্রসঙ্গ। জানালেন, কেন্দ্রীয় সরকার পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার আনছে। নতুন কাঠামোতে কর দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হবে, ব্যবসা-বাণিজ্যে জটিলতা কমবে এবং সর্বোপরি সাধারণ মানুষের ওপর থেকে করের চাপ কিছুটা হলেও লাঘব হবে। মোদির কথায়, এই দীপাবলিতে আমি আপনাদের জন্য দ্বিগুণ আনন্দের ব্যবস্থা করছি। আমরা নতুন প্রজন্মের জন্য জিএসটি সংস্কার আনছি। এর ফলে গোটা দেশের করের বোঝা কমবে।
ভাষণের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার দিকেও দৃষ্টি ফেরান। পেহেলগাম হত্যাকাণ্ড ঘিরে পাকিস্তানকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। তার অভিযোগ, সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গিরা সাধারণ মানুষকে ধর্ম জিজ্ঞাসা করে হত্যা করেছে- যা গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। সেই ক্ষোভ থেকেই ‘অপারেশন সিঁদুর’র সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট জানান, ২২ এপ্রিলের সেই হামলার পরে সামরিক বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল কোথায়, কখন, কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে, তা সম্পূর্ণভাবে সেনাবাহিনী ঠিক করেছে। তার দাবি, যা করা হয়েছে, তা গত কয়েক দশকে হয়নি।
ভারতের কৃষক, পশুপালক ও মৎস্যজীবীদের স্বার্থ রক্ষায় কোনো আপস হবে না বলে জানান মোদি। বলেন, মার্কিন প্রশাসনের চাপ ও বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে বলেন, ভারতের কৃষক, পশুপালক এবং মৎস্যজীবীর স্বার্থে কোনো অহিতকারী নীতি গ্রহণ করা হবে না। আমি দেওয়ালের মতো দাঁড়িয়ে তাদের রক্ষা করব। রাজনৈতিক দিক থেকেও শুক্রবারের ভাষণ ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। লালকেল্লা থেকে ভাষণ দেওয়ার নিরিখে ইন্দিরা গান্ধীকে ছাপিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলেন নরেন্দ্র মোদি। টানা ১২ বার এই মঞ্চ থেকে ভাষণ দিয়ে তিনি এক ঐতিহাসিক রেকর্ড গড়লেন। তার আগে রয়েছেন শুধু জওহরলাল নেহরু। একইসঙ্গে টানা ১০৩ মিনিট বক্তব্য দিয়ে ভারতের ইতিহাসে দীর্ঘতম বক্তৃতার রেকর্ড করেন তিনি। স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩৪ মিনিটে শুরু হওয়া এই ভাষণ শেষ হয় সকাল ৯টা ১৭ মিনিটে। এর মাধ্যমে মোদি তার আগের বছরের রেকর্ডও ভেঙে দেন, যখন তিনি ৯৮ মিনিট (১ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট) বক্তব্য রেখেছিলেন।