মানবজীবনের মূল্য
ইসলামের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো মানুষের জীবন, সম্পদ এবং সম্মানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। রাসুল (সা.) বিদায় হজে বলেছিলেন, “জানবো, তোমাদের মাল, সম্মান এবং রক্ত একে অপরের উপর হারাম, যেমন আজকের দিন, এই মাস ও এই শহর তোমাদের জন্য হারাম।” (বুখারি ও মুসলিম)
একজন নির্দোষ মানুষকে হত্যা করা মানে সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করার সমতুল্য অপরাধ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যে ব্যক্তি মানুষ হত্যা করবে বা মাটিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে ব্যতীত, সে যেন পুরো মানবজাতিকে হত্যা করেছে। আর যে একজনের প্রাণ বাঁচাবে, সে যেন সব মানুষকে বাঁচিয়েছে।” (সুরা মায়িদা : ৩২)
আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতা
আমাদের সমাজের সমস্যার মূল কারণ হলো আল্লাহর হুকুমের অবমাননা। সালাফরা বলতেন, “কোনো বিপদ আসে না গুনাহ ছাড়া, এবং কোনো বিপদ দূর হয় না তাওবার মাধ্যমে।” আল্লাহ তায়ালা বলেন, “মানুষের কৃতকর্মের কারণে সমুদ্র ও স্থলে বিপর্যয় ছড়ায়, যা তাদেরকে শাস্তি দেয় যাতে তারা ফিরে আসে।” (সুরা রুম : ৪১)
আধুনিক রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হলো নাগরিকদের জীবন নিরাপদ রাখা। কিন্তু বাস্তবে, ক্ষমতাশালী ভিআইপি ব্যক্তিরা বিশেষ সুরক্ষা পায়, সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা অনেকক্ষেত্রে উপেক্ষিত। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর (রা.) বলতেন, “ফোরাতের তীরে যদি একটি কুকুরও না খেয়ে মারা যায়, তারও জন্য আমাকে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে।”
নিষ্ঠুর অপরাধে কঠোর শাস্তি
দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি বেড়েছে। জনসম্মুখে হত্যার ঘটনা ঘটলেও তাতেই কোনো কার্যকর বিচার হয় না। ইসলামে ‘কিসাস’ নামে বিধান আছে, যা মানুষের জীবন রক্ষার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে। আল্লাহ বলেন, “কিসাসের মধ্যে তোমাদের জন্য জীবন নিহিত রয়েছে, যাতে খুন-হত্যা থেকে বিরত থাকো।” (সুরা বাকারা : ২৭৯)
কিসাস মানে হলো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য হত্যার শাস্তি নিশ্চিত করা। এটি বৈষম্যহীনভাবে প্রযোজ্য, রাষ্ট্রপ্রধান বা তাদের সন্তানও এ নিয়মের বাইরে নয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, “আমার মেয়ে ফাতিমাও যদি চুরি করে, তার হাত কেটে দেওয়া থেকে আমি দ্বিধা করব না।”
শরিয়াহ আইনের সৌন্দর্য
ইসলামী শাসনের মূল বৈশিষ্ট্য হলো বৈষম্যহীন শাসন। আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য, কোনো ব্যক্তি বিশেষাধিকার পায় না। ইসলামি আইন চির-আধুনিক, বাস্তবসম্মত ও মানবিক। কিসাসের মাধ্যমে হত্যা অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হয়। নিহতের পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী রক্তপণ গ্রহণ বা ক্ষমা দেওয়া যেতে পারে।
মানবরচিত আইন কখনো পুরোপুরি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে না; কেবল আল্লাহর আইন তা পারে। খুন-ধর্ষণের মতো অপরাধের শাস্তি প্রকাশ্যে কার্যকর করার নির্দেশ আল্লাহ পূর্বেই দিয়েছেন। (সুরা নূর : ২)
ইসলাম ও ইসলামি শাসন
ইসলামী শাসন চাওয়া প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। এটি রাজনৈতিক নয়, এটি ঈমানের অংশ। ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে শান্তি, নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত হয়। প্রাচীন মুসলিম দেশগুলিতে নারী একাকী রাতের বেলা হেঁটেও নিরাপদ ছিল। আমাদের দেশে যদি ইসলামি শাসন থাকত, তাহলে অপরাধীরা উপযুক্ত শাস্তি পেত।
দায়িত্ব গ্রহণ
ইসলামী শাসন চাওয়া ও প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানের দায়িত্ব। আল্লাহ আমাদের সেই দিন দেখার তাওফিক দিন, যখন আমরা তাঁর আইন অনুযায়ী শাসিত হব।
ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় সুন্নতি আমল
নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোরআন-সুন্নাহর দোয়া ও আমল মেনে চলা জরুরি। ফরজ নামাজ পড়া দিয়ে দিন শুরু করা, সকালে ও রাতে জিকির করা, যাত্রা শুরু ও সমাপ্তি, যানবাহনে ওঠা ও নেমে দোয়া আদায় করা উচিত। (হিসনুল মুসলিম, শায়খ আহমাদুল্লাহ)
আল্লাহ তায়ালা সবার জীবন ও সম্পদ রক্ষা করুন, আমাদের আমল করার তাওফিক দিন।