জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কয়েক দফা আলোচনার পর জুলাই সনদের খসড়া তৈরি করে তা দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, দলগুলোর মতামত নেওয়ার পর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সনদ ঘোষণা করা হতে পারে।
তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে বড় ধরনের মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। বিএনপি বলছে, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদই সনদ কার্যকর করবে। বিপরীতে, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদের মতো দলগুলো দাবি করছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই গণভোট, গণপরিষদ নির্বাচন বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন করা উচিত। এই অবস্থায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্তের দিকে নজর রাখছে।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, “সনদ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর উপর নির্ভর করবে। আমরা কোনো কিছু চাপিয়ে দিতে পারি না। তবে দলগুলোর সঙ্গে প্রক্রিয়া নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা করব।” বিএনপি যদিও প্রথমে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে ছিল, এখন তারা আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান বের করা সম্ভব হবে, সেই আলোচনায় আমরা অংশগ্রহণ করব।” অন্যদিকে এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী বলছে, আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। তারা শিগগিরই কমিশনের স্বাক্ষরিত সনদ গণভোট বা গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যকর করার দাবি তুলছেন।
আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে কমিশন সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি প্যানেল গঠন করেছে। সাবেক বিচারপতি, আইন শিক্ষক ও সিনিয়র আইনজীবীদের মতামত নিয়ে প্যানেল জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে পরামর্শ দেবে, যা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে উপস্থাপন করা হবে। এই বৈঠক আগামী ২৫শে আগস্টের পর অনুষ্ঠিত হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধের মূল কারণ হলো সনদ বাস্তবায়ন কবে ও কীভাবে হবে। বিএনপি বলছে, ঐকমত্য কমিশনের খসড়া অনুযায়ী পরবর্তী সংসদ এটি বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদের মতো দলগুলো সনদকে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই কার্যকর করার পক্ষে।
এনসিপি মনে করছে, জুলাই অভ্যুত্থানের পর প্রণীত সনদ যদি অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এর বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী ঘোষণা দিয়েছে, সনদ বাস্তবায়ন না হলে আন্দোলনেও নামবে।
বিএনপি যদিও আগে সরাসরি নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে সনদ কার্যকর করার দাবি জানিয়েছিল, এখন তারা কিছুটা কৌশলী অবস্থান গ্রহণ করেছে। দলটি চলতি মাসের শেষের বৈঠকে অংশগ্রহণ করবে এবং কমিশনের প্রস্তাবনা ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনায় বসবে।