বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)-এর ভেতরে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ধীরে ধীরে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর একটি প্রভাবশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এখানে ছাত্রলীগের ক্যাডার, আওয়ামী পরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি এবং ভারতপন্থিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ায় রাষ্ট্রের নিরাপত্তা যেকোনো সময় বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা—মেজর জেনারেল এম মনজুর আহমেদ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল শামসুল হক এবং মেজর জেনারেল টিএম জোবায়ের—এনএসআইকে ‘র’-ঘনিষ্ঠ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক সিদ্দিকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মনজুর আহমেদকে বিশেষ বিবেচনায় ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে এনএসআই মহাপরিচালক করা হয়। তিনি পাঁচ বছর এ পদে থেকে সংস্থাটিকে বিরোধীদল দমন এবং ভারতীয় গোয়েন্দাদের স্বার্থে ব্যবহার করার পথ তৈরি করেন।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায়ও নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসন ও নিয়োগ কমিটির কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে দলীয় এবং ভারত-ঘনিষ্ঠদের চাকরি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় থেকেই এনএসআইতে রাজনৈতিক বিবেচনায় জনবল নিয়োগের মাধ্যমে ‘র’-এর অনুপ্রবেশ শুরু হয়। বিশেষ করে ২০০০–২০০১ ব্যাচের একটি গ্রুপকে পরবর্তী সময়ে পুনর্বহাল করে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়, যদিও তাদের চাকরি এক সময় বাতিল হয়েছিল এবং আদালতও তাদের আবেদন খারিজ করেছিল।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর ওই কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক আদেশে পুনর্বহাল করা হয়। বর্তমানে তাদের বেশিরভাগই যুগ্মপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই কর্মকর্তাদের মাধ্যমেই এনএসআইতে ‘র’-এর কার্যক্রম জোরদার হয়। তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে ভারতে পাঠিয়ে বিশেষ গোয়েন্দা প্রশিক্ষণ করানো হয় এবং দেশে ফিরে তারা এনএসআইর গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়।
অভিযোগ রয়েছে, এনএসআইয়ের প্রাক্তন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মনজুর আহমেদের ঘনিষ্ঠ মহলকে কেন্দ্র করে এমনকি ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবসা পর্যন্ত গড়ে তোলা হয়—যেমন একটি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানি এবং টেলিকম লাইসেন্স সংগ্রহের ঘটনা।
সব মিলিয়ে, গত ১৫ বছরে এনএসআইতে ‘র’-ঘনিষ্ঠ নিয়োগ ও প্রভাব বাড়তে বাড়তে সংস্থাটিকে কার্যত ভারতের কৌশলগত স্বার্থে ব্যবহারের মতো অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।