পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ধ্বনিগুলোর একটি হলো আজান। মুসলিম হোক কিংবা অমুসলিম—কোটি মানুষের অন্তরে এই আহ্বান বিশেষ এক স্পর্শ জাগায়। কারণ এটি শুধু কোনো শব্দ নয়; বরং মহান সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তার ডাকে সাড়া দেওয়ার আহ্বান। তাই আজানের সুর যেমন মুসলমানের অন্তরকে নাড়া দেয়, তেমনি অমুসলিমদের মনেও আকর্ষণ তৈরি করে। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে এর অসংখ্য প্রমাণ পাওয়া যায়।
তবে সব মানুষের অনুভূতি একই রকম নয়। আল্লাহর বাণীতে এসেছে—যাদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দেন, তারা কখনো হেদায়েতের আলো পায় না। তাই ইসলামে আজানের গুরুত্ব অপরিসীম। আজান শোনা ও এর জবাব দেওয়া সুন্নত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন: “যখন তোমরা আজান শুনবে, মুয়াজ্জিন যা বলে তোমরাও তাই বলবে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬১১)
আজানের জবাব দেওয়ার নিয়ম
মুয়াজ্জিনের প্রতিটি বাক্যের পর শ্রোতাও অনুরূপ বাক্য বলবে।
তবে “হাইয়্যা আলাস সালাহ” ও “হাইয়্যা আলাল ফালাহ” শোনার সময় উত্তর হবে: “লা হাওলা ওয়া লা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৩৮৫)
ফজরের আজানে “আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম”-এর জবাব মুয়াজ্জিনের মতোই দেওয়া উত্তম।
প্রচলিত কিছু ভ্রান্তি
“আল্লাহু আকবার” শুনে “জাল্লা জালালুহু” বলা সুন্নত নয়।
“আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ” শুনে সঙ্গে সঙ্গে দরুদ পড়া উচিত নয়। দরুদ পড়া যাবে আজান শেষে।
আজানের সময় বৃদ্ধাঙুলে চুমু খেয়ে চোখে মুছে নেওয়ার প্রথা শরিয়তসম্মত নয়।
আজানের জবাব না দিলে “বেইমান হয়ে যায়”—এ ধারণার কোনো ভিত্তি নেই।
যারা আজানের জবাব দেবে না
নামাজরত ব্যক্তি, খাওয়া-দাওয়া, ইস্তিঞ্জা বা বৈবাহিক সম্পর্কের সময়।
তবে এসব কাজ শেষে সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেওয়া উত্তম।
কোরআন তেলাওয়াতকারী সাময়িক বিরতি দিয়ে জবাব দেবেন।
জুমার দ্বিতীয় আজান
খতিব মিম্বরে বসার পর দেওয়া দ্বিতীয় আজানের জবাব মুখে না দিয়ে মনে মনে দেওয়া উত্তম।
আজানের সময় করণীয়
চুপ থাকা ও মনোযোগ দিয়ে শোনা।
অপ্রয়োজনীয় কথা বা কাজ বন্ধ রাখা।
ওয়াজ, বক্তৃতা বা সভার মাঝেও আজান হলে বিরতি দিয়ে জবাব দেওয়া।
রেডিও-টেলিভিশনের আজান
সরাসরি সম্প্রচারিত আজানের জবাব দেওয়া সুন্নত।
তবে রেকর্ড করা আজানের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
আজানের পর আমল
দরুদ শরিফ পাঠ ও বিশেষ দোয়া করা সুন্নত।
হাদিসে এসেছে, এ দোয়া পাঠকারীর জন্য কেয়ামতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুপারিশ অবধারিত হবে। (বুখারি, হাদিস: ৬১৪; মুসলিম, হাদিস: ৩৮৪)
তবে আজানের পর হাত তুলে সম্মিলিত মুনাজাত করার প্রমাণ হাদিসে নেই।
একামতের জবাব
আজানের মতো একামতের জবাব দেওয়াও মুস্তাহাব। শুধু “ক্বদ ক্বামাতিস সালাহ”-এর জবাবে বলা হবে: “আক্বামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহা।” (আবু দাউদ, হাদিস: ৫২৮)