গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। দেশটি ৫৭৪টি ড্রোন এবং ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এ হামলা চালায়। এতে লভিভ শহরে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ট্রান্সকারপাথিয়া অঞ্চলে আরো ১৫ জন আহত হয়েছেন। বিবিসি নিউজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই হামলার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ থামাতে কূটনৈতিক উদ্যোগ শুরু করেছেন। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিই সিবিহা বলেছেন, এসব হামলা দেখিয়ে দিচ্ছে কেন যুদ্ধ বন্ধের প্রচেষ্টা এতো জরুরি।
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে “নিরপেক্ষ ইউরোপীয় দেশ” — যেমন সুইজারল্যান্ড বা অস্ট্রিয়ায় — বৈঠকে বসতে প্রস্তুত। তিনি ইস্তানবুলের কথাও উড়িয়ে দেননি। তবে বুদাপেস্টে বৈঠকের ব্যাপারে তিনি অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় এমন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প সোমবার হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত রাশিয়া মোট ৬১৪টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যার মধ্যে ৫৭৭টি ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে। জুলাইয়ের পর এটিই সবচেয়ে বড় আক্রমণ। সাধারণত রুশ হামলা পূর্বাঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে এবার পশ্চিমাঞ্চলেও আঘাত হেনেছে।
২০২২ সালে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর থেকে রাশিয়া ইতোমধ্যে ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলের বড় অংশ দখল করেছে। বর্তমানে তারা প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে, যার মধ্যে ২০১৪ সালে দখল করা ক্রিমিয়াও রয়েছে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এই আক্রমণে হাইপারসনিক, ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী বলেছে, অনেক হামলা রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চল ও কৃষ্ণসাগর থেকে চালানো হয়, একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয় দখলকৃত ক্রিমিয়া থেকে।
লভিভ অঞ্চলে এক ব্যক্তির মৃত্যু ছাড়াও ২০টির বেশি বেসামরিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে আবাসিক বাড়ি ও একটি শিশুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ট্রান্সকারপাথিয়ার মুকাচেভো শহরে মার্কিন ইলেকট্রনিকস কোম্পানির কারখানায় হামলায় আরো ১৫ জন আহত হয়েছেন। সেখানে কফি মেশিনসহ গৃহস্থালী পণ্য উৎপাদন হতো।
অন্যদিকে জেলেনস্কি সাংবাদিকদের বলেছেন, মস্কোর পক্ষ থেকে এখনো যুদ্ধ শেষ করতে সত্যিকারের আলোচনায় বসার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। বুদাপেস্টে আলোচনার ব্যাপারে তিনি নিরুৎসাহিত, কারণ হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র। যদিও হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, আলোচনার জন্য তারা নিরাপদ ও ন্যায্য পরিবেশ দিতে প্রস্তুত।
জেলেনস্কি আরো জানান, রাশিয়া দক্ষিণের জাপোরিঝঝিয়া ফ্রন্টে সেনা জড়ো করছে। “আমরা দেখতে পাচ্ছি, তারা কুর্স্ক দিক থেকে সেনা সরিয়ে জাপোরিঝঝিয়ায় পাঠাচ্ছে।”
এদিকে ইউক্রেন বলেছে, তাদের সেনারা রাশিয়ার রোস্তভ অঞ্চলের একটি তেল শোধনাগারে হামলা চালিয়েছে। এছাড়া দখলকৃত দোনেৎস্ক শহরে রুশ ড্রোন ডিপোসহ অন্যান্য সামরিক স্থাপনাতেও আঘাত হেনেছে।