“প্রতিটি নাটক হৃদয় ছুঁয়ে যায়”—বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রযোজনা দেখে এমন আবেগঘন অনুভূতি প্রকাশ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম।
শুক্রবার জাতীয় নাট্যশালায় সমাপনী প্রদর্শনী শেষে তিনি বলেন, “এর আগেও আমি নাট্যকলা বিভাগের প্রযোজনা দেখেছি, সত্যিই তারা অসাধারণ। প্রতিটি নাটক আমাদের জন্য একেকটি ভাষণ হয়ে আসে। আজকের আয়োজন আমাকে গভীরভাবে ছুঁয়ে গেছে। এখানে আসতে পেরে আমি সৌভাগ্যবান মনে করছি। নাট্যকলা বিভাগের জন্য আমার শুভকামনা রইল—তারা যেন আরও অনন্য সৃষ্টির আনন্দ উপহার দিতে পারে।”
প্রাচীন গ্রিক নাট্যকার ইস্কিলাসের কালজয়ী ট্র্যাজেডি “তর্পণ বাহকেরা” মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে শেষ হয় নাট্যকলা বিভাগের আয়োজিত তিন দিনব্যাপী নাট্য উৎসব। ১৯ আগস্ট শুরু হওয়া এই প্রদর্শনীর শেষ দিনে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় ছিল।
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় নাটকটির পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দেন নাট্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান ক্যাথরিন পিউরীফিকেশন। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো “তর্পণ বাহকেরা” শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে প্রদর্শিত হলো।
নির্দেশক ক্যাথরিন পিউরীফিকেশন বলেন, সাম্প্রতিক বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নাটকটির গুরুত্ব অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। রাজপরিবারের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে রচিত এই ট্র্যাজেডিতে হত্যাকারীরা নিয়তির বিধানে নিজেদের পাপের শাস্তি ভোগ করে। তাঁর মতে, বর্তমান বিশ্বেও আন্তঃরাষ্ট্রীয় দ্বন্দ্ব ও সংঘাত মানবসম্ভাবনাকে সীমিত করছে এবং মানুষের চিন্তার পরিসর সংকুচিত করছে। এ সময় শিল্পের মাধ্যমে উত্তর খোঁজা জরুরি।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, “অস্থিরতার এ সময়ে শিল্পই মানুষকে নতুন মানবিকতার আলোয় আলোকিত করবে এবং পৃথিবীকে আবার ছন্দে ফিরিয়ে আনবে।”
প্রদর্শনী শেষে এক দর্শক বলেন, “নাটক সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিচ্ছবি। এই নাটক আমাদের শেখায়, হিংসা ও প্রতিশোধ কোনোদিন শান্তি বয়ে আনতে পারে না।”
তিন দিনব্যাপী এই আয়োজনে প্রতিদিন সন্ধ্যায় দর্শকদের বিপুল উপস্থিতি প্রমাণ করেছে যে মঞ্চনাট্য আজও নতুন প্রজন্মের সৃজনশীলতা ও সমাজ সচেতনতার শক্তিশালী বাহন—যা বিনোদনের পাশাপাশি জীবনের গভীর বার্তা পৌঁছে দেয়।