রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী মিরপুর বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ নানা বিতর্ক ও আর্থিক অনিয়মে জর্জরিত অবস্থায় চলছে। এ সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে অভিযুক্ত করা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশনবীশকে।
তথ্য অনুযায়ী, একসময় তিনি ঢাকা-১৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে পরবর্তীতে রাজনৈতিক অবস্থান পাল্টে বিএনপি-জামায়াত ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। ইলিয়াস মোল্লা সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে গেলেও তার প্রভাবের ছায়া এখনো এই প্রতিষ্ঠানে বিরাজ করছে।
অভিযোগ রয়েছে, ২০১৯ সালে পূর্বপরিকল্পিত ও অনিয়মতান্ত্রিক নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অধ্যক্ষ পদে বসেন মোস্তফা কামাল খোশনবীশ। এরপর থেকেই তিনি নিয়মবহির্ভূত ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থ কেলেঙ্কারি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। এছাড়া মিরপুরের শহীদ জিয়া ডিগ্রি কলেজের নাম পরিবর্তন করে পল্লবী মহিলা কলেজ রাখার ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ঢাকা-১৬ আসনে শিক্ষক নিয়োগ ও বদলির ক্ষেত্রেও তার নিয়ন্ত্রণ ছিল ব্যাপক, যেখানে দলীয় স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে ৩০ জুলাই পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মোস্তফা কামাল খোশনবীশের নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, পরীক্ষা ও নিবন্ধন ছাড়াই শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এমনকি সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিশেষ কমিটি গঠন করে শতাধিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা আইনের পরিপন্থী।
প্রতিষ্ঠানটির জমিতে থাকা ১৭টি দোকান থেকে ২০১৯-২০২৫ সাল পর্যন্ত এক কোটি ৪২ লাখ টাকার বেশি ভাড়া আদায় করা হলেও ব্যাংকে জমার কোনো প্রমাণ নেই। একইভাবে ভ্যাট ও আয়কর বাবদ প্রায় ২৯ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি। এছাড়া পুরোনো কাগজ বিক্রি, অতিরিক্ত পাঠদানের সম্মানি এবং নিয়োগ পরীক্ষার খাত থেকেও বিপুল অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্তে বলা হয়, ২০১৮-১৯ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৫৬ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল খোশনবীশ জানান, তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা। তিনি দাবি করেন, শহীদ জিয়া ডিগ্রি কলেজের নাম পরিবর্তনে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তার ভাষ্য অনুযায়ী, তৎকালীন এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা প্রধানমন্ত্রীর একটি ডিও লেটারের মাধ্যমে নাম পরিবর্তন করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, “আমি একজন শিক্ষক। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখা ছাড়া উপায় ছিল না। তখনকার এমপিকে উপেক্ষা করার সুযোগও আমার ছিল না।”