বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের কবরকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত একটি গল্পকে মিথ্যা প্রমাণিত করেছে সাম্প্রতিক তথ্য ও ছবির বিশ্লেষণ। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, বিশেষ করে বিএনপি ও ছাত্রদলসহ বিভিন্ন মহল দাবি করে এসেছে যে, পাকিস্তানের করাচি মাসরুর ঘাঁটির সামরিক কবরস্থানে মতিউর রহমানের কবরের এপিটাফে লেখা ছিল: “ইধার সো রাহা হে এক গাদ্দার” (এখানে শুয়ে আছে একজন বিশ্বাসঘাতক)।
তবে কবরস্থানের বিভিন্ন সময়ের ছবির বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, এমন কোনো বাক্য সেখানে কখনোই লেখা ছিল না।

প্রথম দিকের ছবিতে দেখা যায়, পুরনো এপিটাফে কেবল মতিউর রহমানের নাম, র্যাঙ্ক এবং মৃত্যুর তারিখ রয়েছে। পরবর্তী ছবিগুলোতেও কেবল “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম” সহ নাম ও পদবী উল্লেখ আছে। কোনোভাবেই ‘গাদ্দার’ শব্দ বা এরূপ কোনো অপমানজনক মন্তব্য সেখানে নেই।

এ প্রসঙ্গে বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেন, পাকিস্তান কখনোই তাদের প্রতিপক্ষদের কবরকে অপমানজনক লেখায় চিহ্নিত করেনি, বরং মর্যাদাপূর্ণভাবে সমাহিত করেছে। এমনকি মতিউর রহমানের আক্রমণে শাহাদাতবরণকারী পাকিস্তানি পাইলট রশিদ মিনহাসের কবরেও শুধুমাত্র ইকবালের কবিতার উদ্ধৃতি রয়েছে, যেখানে বীর ও কাপুরুষের পার্থক্য কাব্যিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

সমালোচকদের মতে, মতিউর রহমানের কবর ঘিরে প্রচলিত এই “গাদ্দার” গল্পটি ছিল সম্পূর্ণ মনগড়া, যা বছরের পর বছর ধরে ঘৃণা ছড়াতে এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যবহার করা হয়েছে। তারা মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত অনেক জনপ্রিয় ন্যারেটিভই বাস্তবতাহীন এবং উগ্র আবেগ ও রাজনৈতিক স্বার্থ দ্বারা প্রভাবিত, যা ইতিহাসের প্রকৃত সত্যকে আড়াল করছে।