গোপালগঞ্জে একের পর এক পদত্যাগের ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ মুকসুদপুর পৌর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের আরও পাঁচজন নেতা দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে জেলায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ মিলিয়ে মোট ১৮ জন নেতা ইতোমধ্যেই পদ ছাড়লেন।
শুক্রবার রাতে মুকসুদপুর উপজেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই পাঁচ নেতা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এর আগের দিন, বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট), একই উপজেলার ননীক্ষীর ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আটজন নেতা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পদত্যাগ করেন। সেদিনই টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রহমান শিকদারও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন।
সর্বশেষ পদত্যাগী পাঁচ নেতা হলেন—মুকসুদপুর পৌর আওয়ামী লীগের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর মো. নিয়ামত খান, ২নং ওয়ার্ডের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. জামাল হোসেন মুন্সী, ৩নং ওয়ার্ডের সভাপতি পরিমল সাহা, সাধারণ সম্পাদক শান্ত সাহা এবং ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম।
লিখিত বক্তব্যে মো. নিয়ামত খান জানান, ২২ আগস্ট থেকে তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক রাখবেন না এবং ভবিষ্যতেও রাখবেন না। তবে দেশ ও জাতির স্বার্থে এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তারা সক্রিয় থাকবেন।
এর আগে ননীক্ষীর ইউনিয়নের আট নেতা সংবাদ সম্মেলনে তাদের পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তারা হলেন—সহ-সভাপতি মনোজ মৌলিক ও কাজী মিজানুর রহমান, সহ-প্রচার সম্পাদক রাসেল শেখ, সদস্য স্বপন শেখ, ১ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি নুর আলম মিয়া, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সম্পাদক সুবল রায়, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক আক্কাস চোকদার এবং ননীক্ষীর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জলিল কাজী।
অন্যদিকে, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রহমান শিকদার জানান, শারীরিক অসুস্থতা ও ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। তাই ২১ আগস্ট থেকে সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন।
তবে মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হায়দার হোসেন বলেছেন, শুধু সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পদত্যাগ বৈধ নয়, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী লিখিত পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপির ইঙ্গিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে, যার ফলে অনেকেই পদ ছাড়ছেন। পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত কিছু নেতা বিএনপিতে যোগ দিতে পদত্যাগ করছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
মুকসুদপুর থানার ওসি মোস্তফা কামাল অবশ্য জানিয়েছেন, কাউকে অযথা গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হচ্ছে না, কেবল অপরাধীদেরই আটক করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এর আগে টুঙ্গিপাড়ার কুশলী ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক নওশের ফকির ও কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্বাস আলী পদত্যাগ করেন। আরও আগে, ১৫ জুন মুকসুদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক কামরুজ্জামান কামাল পদ ছাড়েন। এছাড়া ২৬ জুলাই সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফাহিম ভূঁইয়া দুধ দিয়ে গোসল করে নাটকীয়ভাবে সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।