পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামাতো ভাই শেখ শাফিনুল হক লাবু বর্তমানে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)-এর যুগ্ম পরিচালক হিসেবে সিলেটে বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, তিনি সিলেট বিভাগে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত থেকে কাজ করছেন এবং ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা ও বিভিন্ন বাহিনীর পলাতক কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর, ৮ আগস্ট তৎকালীন এনএসআই মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. হোসাইন আল মোরশেদ তাকে গোপনে বদলি করে সিলেটে পাঠান। সেখানে তাকে সেফ জোনে রাখার উদ্দেশ্যেই এ বদলি করা হয় বলে জানা গেছে।
শেখ শাফিনুল হক লাবু ২০১২ সালে এনএসআই-এ সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। নিয়োগ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলেও শেখ হাসিনার আত্মীয় হওয়ার কারণে প্রভাব খাটিয়ে তিনি চাকরি পান। ২০১৯ সালে তাকে উপপরিচালক এবং ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর ‘বিশেষ কৃতিত্বের পুরস্কার’ হিসেবে যুগ্ম পরিচালক পদে উন্নীত করা হয়। তিনি কলকাতা মিশনে দ্বিতীয় সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, কলকাতা উপদূতাবাসে দায়িত্ব পালনকালে তিনি ‘র’-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন। এনএসআই কর্মকর্তাদের ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রশিক্ষণে পাঠানোর মূল সমন্বয় ও তদারকির দায়িত্বও তার ওপর ছিল। এর জন্য তিনি বিশেষ সুবিধা পান। কলকাতায় নারীসংক্রান্ত একাধিক কেলেঙ্কারি এবং তার ব্যাংক হিসাবে ১৩০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগও রয়েছে।
শেখ পরিবারের সদস্য হওয়ায় তার বিরুদ্ধে এনএসআই কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত হয়নি। ধারণা করা হয়, শেখ হাসিনার পতনের পরও এনএসআইয়ের মতো সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানে বহাল থাকা তিনিই একমাত্র পরিবারের সদস্য। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তিনি এনএসআইয়ের অঘোষিত প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন এবং পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীতে নিয়োগ বাণিজ্যে তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।
ভারতে কর্মরত থাকাকালে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় দিবসগুলোতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতেন এবং প্রটোকল ভেঙে ‘র’-এর সদস্যদের এসব অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাতেন। এমনকি ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার জন্য ভারতের খ্যাতনামা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠিকে বাংলাদেশে আনার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারি কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। ঢাকার রামপুরায় আওয়ামী লীগের শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, যেখানে তার বোন শেখ মলি (ঢাকা মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক) এবং বড় ভাই শেখ অলিদুর রহমান হীরা উপস্থিত ছিলেন।
সম্প্রতি র্যাব স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের মূল হোতা হিসেবে শেখ অলিদুর রহমান হীরাকে গ্রেপ্তার করেছে। বিমানবন্দর দিয়ে বড় ধরনের স্বর্ণ চোরাচালানে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
শেখ শাফিনুল হক লাবু ও শেখ অলিদুর রহমান হীরার বাবা শেখ আকরাম হোসেন শেখ হাসিনার মা ফজিলাতুন্নেছার আপন চাচাতো ভাই।