ত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাশাসন। হাসিনা দেশ ছাড়ার পর দলের অনেক শীর্ষ নেতা ভারসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেন।
তবে বিদেশে অবস্থান করেও আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরাতে নানা উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠরা। দেশে থাকা নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সাথেও তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সম্প্রতি এরই অংশ হিসেবে দিল্লিতে হাসিনার সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ, যিনি ব্যাংক তহবিল কেলেঙ্কারি ও অর্থপাচারের অভিযোগে সমালোচিত। বৈঠকে আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরাতে নতুন কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়।
সূত্র জানায়, শেখ হাসিনাকে সহায়তার জন্য এস আলম ২৫০০ কোটি টাকা দিয়েছেন এবং আরও ২০০০ কোটি টাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অর্থটি লবিং, প্রশাসনিক প্রভাব বিস্তার ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে ব্যয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারকে হটাতে দেশজুড়ে নাশকতার ছক কষছে আওয়ামী লীগ। বিদেশে পলাতক নেতাদের সঙ্গে আমলা, সাবেক সেনা-পুলিশ কর্মকর্তা ও দলীয় ক্যাডারদের নিয়ে নীলনকশা তৈরি হচ্ছে। জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তিকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নজরদারি করতে গিয়ে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
আরেক সূত্র জানায়, এস আলমের মক্কা সফরের আসল উদ্দেশ্য ছিল পলাতক আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক এবং বিদেশে বিনিয়োগ পরিকল্পনা। ফেয়ারমন্ট হোটেলে তিনি আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে দেশবিরোধী নানা পরিকল্পনা করেন। এরপর মদিনায় গিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দেখা করে ৬ আগস্ট দুবাই হয়ে দিল্লি যান।
দিল্লিতে তিনি স্ত্রী, সন্তান ও ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এক চেয়ারম্যানসহ অবস্থান করেন ওবেরই হোটেলে। সেখানে সাবেক মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোহাম্মদ আলী আরাফাত প্রমুখের সঙ্গে বৈঠক করেন।
৮ আগস্ট শেখ হাসিনার বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দীর্ঘ সময় ধরে তাদের আলোচনা হয়। বৈঠকে ভারতের কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা চার হাজার পাঁচশ কোটি টাকা সহায়তা চান, যা দিতে এস আলম সম্মত হন।
অর্থ ব্যয়ের খাত নির্ধারণ করা হয় পাঁচটি বিষয়কে ঘিরে—
১. আন্তর্জাতিক লবিং ও নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করা,
২. নভেম্বর-ডিসেম্বরে নাশকতা ঘটিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে ফেলা,
৩. আমলা, পুলিশ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রভাবিত করা,
৪. নেতাকর্মীদের জামিন নিশ্চিত করা,
৫. এস আলম গ্রুপের শ্রমিকসহ বিভিন্ন সংগঠনকে ব্যবহার করে আন্দোলন গড়ে তোলা।
এই অর্থ ব্যবস্থাপনার জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়, যার দায়িত্ব পান জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।