চব্বিশের জুলাই বিপ্লবে সাহসের উজ্জ্বল প্রদীপ হয়ে জ্বলে উঠেছিলেন শহীদ আবু সাঈদ। পুলিশের গুলির মুখে দাঁড়িয়ে দুহাত প্রসারিত করে বুক চিতিয়ে তিনি যেন বলতে চেয়েছিলেন, “এভাবে মানুষ মারা চলবে না।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বুধবার সূচনা বক্তব্যে এ কথা উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই, আষাঢ়ের শেষ দিনে রংপুরে বৃষ্টি থাকলেও শহর উত্তাল হয় ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’ স্লোগানে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বিশাল প্রতিবাদ মিছিলের অংশ নেন। পুলিশ বাধা দিলে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডের মাধ্যমে তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়। এসময় পাঁচ নম্বর আসামি মো. আরিফুজ্জামান ওরফে জীবনের নেতৃত্বে পাঁচ পুলিশ সদস্য আবু সাঈদের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে।
চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, “ওই দিন আষাঢ়ের বাদল বা মেঘ না থাকলেও বৃষ্টি ঝরেছিল—সে ছিল গুলির বৃষ্টি। নিরপরাধ ছাত্র-জনতার রক্ত ঝরেছিল।” পুলিশের লাঠিচার্জের মধ্যেও আবু সাঈদ বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে সাধারণ ছাত্রদের রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার বুকের দিকে তাকিয়ে গুলি চালানো হয়। প্রথম গুলি তার পেটে লাগে, এরপর দু’টি রাউন্ড বুকের দিকে, এবং সহযোদ্ধাকে তোলার সময় আবার গুলি করা হয়। এতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাওহিদুর হক সিয়ামও আহত হন। রিকশায় হাসপাতালে নেয়ার পথে আবু সাঈদ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে এই ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দোষীদের বিচার দাবি করেন।
আজ ট্রাইব্যুনালে আবু সাঈদকে গুলি করার দুটি ভিডিও প্রদর্শন করা হয়, যা দেখার সময় তার বাবা মকবুল হোসেন অশ্রুসিক্ত হন। প্রসিকিউটরের আবেদনে আগামীকাল এই মামলায় প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়।
আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে আজ ছয়জন হাজির ছিলেন। ২৫ বছর বয়সী আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
নিরস্ত্র অবস্থায় পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলন আরও গতিশীল হয় এবং শেষ পর্যন্ত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও পালানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে সরকারের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছিল। এই জাজ্জ্বল্যমান অপরাধের বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।