ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত মঙ্গলবার এ রোডম্যাপ অনুমোদন দেয় কমিশন। আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ইসির পক্ষ থেকে এ রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে।
রোডম্যাপ অনুযায়ী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের ১৮ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হতে পারে। ভোট হতে পারে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। পরিকল্পনা অনুযায়ী তফসিল ঘোষণা করা হলে তফসিলের পর থেকে নির্বাচন আয়োজনের জন্য ৫৭ দিনের মতো সময় পাবে ইসি। প্রবাসী ভোটারদের সুবিধার্তে তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন আয়োজনের মধ্যবর্তী সময় ১০ দিন বেশি রাখা হয়েছে। ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
রোডম্যাপ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নির্বাচন উপলক্ষে ২৪টি বিষয় ২০৭ ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। অন্যতম কয়েকটি ধাপ হলো- অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ, ভোটার তালিকা প্রণয়ন, নির্বাচনি আইন-বিধি সংস্কার, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ চূড়ান্তকরণ, পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালা, বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালার অনুমতি প্রদান, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট আইন-বিধিমালার সংশোধনী একীভূতকরণ এবং ম্যানুয়েল নির্দেশিকা প্রণয়ন, পোস্টার ও পরিচয়পত্র মুদ্রণ, নির্বাচনি দ্রব্যাদি সংগ্রহ, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও নির্বাচনি দ্রব্যাদির ব্যবহার উপযোগীকরণ, নির্বাচনি বাজেট প্রস্তুত ও বাজেট বরাদ্দ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, নির্বাচনের জন্য জনবল ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কার্যক্রম, আন্তঃমন্ত্রণালয় যোগাযোগ, আইসিটি সহায়তা, রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি প্রচার, উদ্বুদ্ধকরণ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সুসংহতকরণ, ফলাফল প্রদর্শন, প্রচার ও প্রকাশবিষয়ক ব্যবস্থা গ্রহণ (ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রচার), ডিজিটাল মনিটর স্থাপন ও যন্ত্রপাতি সংযোজন, বেসরকারি প্রাথমিক ফলাফল প্রচার, পোস্টাল ভোটিং ও বিবিধ।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, নির্বাচনকেন্দ্রিক আট শ্রেণির অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। এ সংলাপ চলবে সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।
চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ ২১ ধাপে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করা হবে। ২০০৭ সালের ৩১ অক্টোবর বা তার আগে যাদের জন্ম, তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তফসিল ঘোষণার ন্যূনতম তিনদিন আগে সংসদীয় ৩০০ আসনভিত্তিক ছবিসহ ও ছবি ছাড়া চূড়ান্ত ভোটার তালিকার সিডি অথবা পিডিএফের লিংক রেজিস্ট্রেশন অফিসারকে পাঠানো হবে আর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের আগে ভোটার তালিকার প্রয়োজনীয়সংখ্যক কপির মুদ্রণ সম্পন্ন করা হবে।
নির্বাচনি আইন-বিধি সংস্কার আগামী ৩১ আগস্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য সময় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এটি ১১ ধাপে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার সম্ভাব্য সময় রাখা হয়েছে।
সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ও নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা কার্যক্রমও ৩১ আগস্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ এবং ৩০ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ১২ ধাপে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে।
সংসদীয় আসনের সীমানাসংক্রান্ত বিষয় ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সমাধান করা হবে। ৯ ধাপে দেশীয় ও বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে মাঠ প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও ব্রিফিংয়ে যোগদানের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হবে।
নির্বাচন আইন-বিধি একীভূতকরণের কাজ ৩১ অক্টোবর ও বিভিন্ন ধরনের ম্যানুয়েল, নির্দেশিকা পোস্টার, পরিচয়পত্র ১৫ নভেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে। নির্বাচনি প্রাথমিক মালামাল ১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রস্তুত ও বিতরণ করা হবে।
ভোটগ্রহণের জন্য আগের সব স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ঢাকনাসহ লক পুনরায় পরীক্ষা করে ব্যবহারের উপযোগী করার কাজ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। ১৫ নভেম্বরের মধ্যে দেশ-বিদেশে পোস্টাল ব্যালটের ব্যয় নির্ধারণ, দুর্গম ও বিশেষ এলাকা চিহ্নিত করা এবং ২০ নভেম্বরের মধ্যে আইনশঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা করা হবে।
আগামী ৫ অক্টোবরের মধ্যে খসড়া (সম্ভাব্য) ভোটকেন্দ্রের তালিকা চূড়ান্ত ও সংরক্ষণ করা, তফসিল ঘোষণার চার-পাঁচদিনের মধ্যে ভোটকেন্দ্রের তালিকা যাচাই করে ইসিতে পাঠানো এবং ভোটগ্রহণের ন্যূনতম ২৫ দিন আগে চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ করা হবে। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুতের লক্ষ্যে বিভিন্ন অফিস-প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর প্রথম সভা হবে। তফসিল ঘোষণার আগে হবে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভাও। নির্বাচনসংক্রান্ত সব সফটওয়্যার ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রস্তুত করে রাখা হবে এবং এআই কার্যক্রম নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে।
রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি প্রচার শুরু হবে তফসিল ঘোষণার পর। এ প্রচার বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারে প্রচার করা হবে। প্রতীক বরাদ্দের পর জাতীয় সংসদের আসনভিত্তিক রিটার্নিং অফিসারের তত্ত্বাবধানে একই প্ল্যাটফর্মে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিয়ে ভোটার ও অংশীজনের উপস্থিতিতে নির্বাচনি ইশতেহার ও ঘোষণাপত্র পাঠ করার ব্যবস্থা করা হবে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটদানের জন্য ব্যালট পেপার প্রেরণ ও ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে ৫ জানুয়ারি। নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে ব্যালট দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করা হবে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তাদের তালিকাভুক্তি ও নিবন্ধন সম্পন্ন করা হবে।
নির্বাচনের ৩০ দিন আগে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হলেই প্রবাসীরা ভোট দিতে পারবেন।
নির্বাচনের তিন সপ্তাহ আগে ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হবে। কারাবন্দিদের কাছে ভোটের দুই সপ্তাহ আগে পোস্টাল ব্যালট পৌঁছানো হবে।