জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে পুলিশ ও সেনাসদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর আহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিছিলে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জাতীয় পার্টিকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশে মিলিত হন। সেখান থেকে তারা স্লোগান দেন— “ব্যান ব্যান জাতীয় পার্টি”, “একটা একটা জাপা ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর”, “ওয়ান টু থ্রি ফোর, জাতীয় পার্টি নো মোর”, “লীগ গেছে যে পথে, জাপা যাবে সে পথে।”
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ভারতের প্রভাবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি দীর্ঘদিন ধরে “বি-টিম রাজনীতি” করেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও জাতীয় পার্টিকে ব্যবহার করে তাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। বক্তারা সতর্ক করে বলেন, এ ধরনের প্রচেষ্টা হলে আবারও “৫ আগস্টের মতো” গণআন্দোলন গড়ে উঠবে।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদপ্রার্থী মোসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ অভিযোগ করে বলেন, “৫ আগস্টের পর থেকে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলন পুলিশ পুরনো কায়দায় দমন করছে। বুয়েটের আন্দোলনেও হামলা হয়েছে। এসব হামলাকারী পুলিশকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।”
ডাকসুর ভিপি প্রার্থী জামালুদ্দীন খালিদ বলেন, “নুরুল হক নুর নিয়ে কারও ভিন্ন মত থাকতে পারে। তবে হাসিনার ফ্যাসিবাদের সময় তিনি ছিলেন সাহসের প্রতীক। জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়েই তার ওপর পরিকল্পিত হামলা হয়েছে। যারা জুলাইয়ের যোদ্ধাদের দমন করতে চাইবে, তাদের আমরা প্রতিরোধ করব।”
ভিপি প্রার্থী ইয়াসিন আরাফাত বলেন, “আওয়ামী লীগ আড়ালে সক্রিয় আছে, জাতীয় পার্টি ছিল তাদের বি-টিম। আজকের ঘটনার পর এই দলকে নিষিদ্ধ করে নির্বাচন থেকে বাদ দিতে হবে, না হলে আবারও শিক্ষার্থীরা মাঠে নামবে।”
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বীন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, “এই হামলার ভিডিও প্রমাণ রয়েছে। প্রত্যেক হামলাকারীকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। নুরুল হক নুরের নিরাপত্তা যখন নেই, তখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোথায় নিরাপদ?”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ বলেন, “আওয়ামী লীগের বি-টিম জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়েই নেতা-কর্মীরা হামলার শিকার হচ্ছেন। ভারতের নির্দেশে যারা কাজ করছে, তাদের দেশে স্থান নেই।”
অন্যদিকে শিক্ষার্থী এবি জুবায়ের বীন নেসারী বলেন, “জাতীয় পার্টি নামে কোনো দল নেই, এটি আওয়ামী লীগের বি-টিম। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের সহযোগী এই দলকে এখনই নিষিদ্ধ করতে হবে।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা প্রতিক্রিয়া জানান। ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম লিখেছেন, “নুরুল হক নুর জাতীয় নেতা। তার ওপর পুলিশের ও সেনাদের হামলা প্রমাণ করে সংস্কার এখনো অনেক বাকি।”
ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান লিখেছেন, “ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরের ওপর হামলা অশনিসংকেত।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা লিখেছেন, “গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর সেনাবাহিনীর হামলা চরম স্পর্ধার বহিঃপ্রকাশ। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।”
এর আগে জাতীয় পার্টি কার্যালয়ের সামনে গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুরুতর আহত হন নুরুল হক নুর। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় সহকর্মীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।