ধরা যাক, হঠাৎ করে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা এলো—বাংলাদেশের ১৬ কোটি নাগরিকের প্রত্যেককে দেওয়া হবে এক কোটি টাকা। মুহূর্তেই সারা দেশজুড়ে আনন্দ-উল্লাস ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বাস্তবে এর ফলাফল কী হবে? অর্থনীতির চাকা তখন কীভাবে ঘুরবে?
মুহূর্তের উচ্ছ্বাস
শুরুতে মানুষ যেন স্বপ্নের রাজ্যে ঢুকে পড়বে। শ্রমিক থেকে শুরু করে কৃষক, চাকরিজীবী থেকে ব্যবসায়ী—সবাই হাতে কোটি কোটি টাকা নিয়ে নতুন জীবন সাজানোর পরিকল্পনা করবে। বাড়ি-গাড়ি, জমি, ব্যবসা—সবকিছুর জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়বে ক্রেতারা। বাজারে হঠাৎ করে চাহিদা আকাশচুম্বী হয়ে যাবে।
বাজারে আগুন
কিন্তু সমস্যা দেখা দেবে তাতেই। সরবরাহ বাড়েনি, অথচ চাহিদা কয়েকশ গুণ বেড়ে গেছে। এক কেজি চাল বা এক বোতল তেলের দাম লাখ টাকায় গড়াতে দেরি হবে না। অর্থনীতিবিদদের ভাষায়, এটি হবে “অতিমুদ্রাস্ফীতি” বা হাইপার-ইনফ্লেশন। টাকা থাকলেও তা দিয়ে কিছু কেনা যাবে না।
টাকার অবমূল্যায়ন
অর্থনীতির নিয়ম হলো, যখন বাজারে অতিরিক্ত টাকা ঘুরতে থাকে, তখন সেই টাকার মান কমে যায়। এক কোটি টাকার নোট তখন হয়ে উঠবে সাধারণ কাগজের মতোই অমূল্য। বিদেশি মুদ্রার বিপরীতে টাকার দরপতন হবে চোখের পলকে। আমদানি নির্ভর বাংলাদেশের জন্য এটি হবে ভয়াবহ আঘাত।
কাজের অনীহা
সবাই যদি কোটি টাকার মালিক হয়, তবে আর কাজ করবে কেন? শ্রমিক কারখানায় যাবে না, কৃষক জমিতে নামবে না, শিক্ষক পড়াতে চাইবে না। স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম ভেঙে পড়বে। উৎপাদন বন্ধ হলে দেশের বাজারে দ্রব্যমূল্যের পাশাপাশি মৌলিক পণ্যের সংকট দেখা দেবে।
ব্যাংক ও ব্যবসায় ধস
মানুষ যখন নগদ টাকার মালিক, তখন ব্যাংকে টাকা রাখার প্রয়োজন কী? ব্যাংকিং খাত অচল হয়ে পড়বে। বিনিয়োগ থেমে যাবে, শেয়ারবাজার অকার্যকর হয়ে পড়বে। পুরো অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়বে মুহূর্তে।
বিশ্বে উদাহরণ আছে
এমন ঘটনা ইতিহাসে ঘটেছে। জিম্বাবুয়ে এক সময় এক টুকরো রুটি কিনতে ট্রিলিয়ন ডলার ছাপিয়েছিল। ভেনেজুয়েলায় সাধারণ খাবারের দাম প্রতিদিন কয়েক গুণ বেড়ে যেত। ফলাফল ছিল একটাই—দারিদ্র্য, বিশৃঙ্খলা আর ধ্বংস।
শেষকথা
বাংলাদেশের সবাই যদি এক কোটি টাকা পায়, শুরুতে সেটা আনন্দের মনে হলেও শেষ পর্যন্ত তা হবে অর্থনীতির জন্য এক অন্ধকার গহ্বর। প্রকৃত উন্নতি আসে শিক্ষা, কর্মসংস্থান, উৎপাদনশীলতা আর সুশাসন থেকে, হঠাৎ করে কোটি কোটি টাকা বিলিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে নয়। উল্লেখ্য বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যেককে এক কোটি করে টাকা দিতে প্রয়োজন ১৬০০ লক্ষ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের ২০ গুন।