১৯৬৫ সালের আজকের দিনে ভোর ৪টায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ট্যাংক বহর পাকিস্তানের ওয়াঘা সীমান্ত অতিক্রম করে লাহোরের দিকে অগ্রসর হয়। পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লাহোর ছিল ভারতীয় সেনাদের প্রধান লক্ষ্য। এভাবেই শুরু হয় ভারত-পাকিস্তান ইতিহাসের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, যেখানে অসীম বীরত্বের সাক্ষর রেখেছিল আমাদের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট।
এর সূচনা এক মাস আগেই হয়। আগস্টে পাকিস্তান চালায় ‘অপারেশন জিব্রালটার’, যার উদ্দেশ্য ছিল কাশ্মীরে ভারতবিরোধী বিদ্রোহ উসকে দেওয়া। কিন্তু ভারত দ্রুত পাল্টা পদক্ষেপ নেয় এবং পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয়। পরে ১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান শুরু করে ‘অপারেশন গ্র্যান্ড স্ল্যাম’, আখনুর অঞ্চলে ভারতের রসদ সরবরাহ বন্ধের চেষ্টা চালায়। কিন্তু ভারত পাঞ্জাব ফ্রন্টে আক্রমণ ছড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তানকে প্রতিরক্ষায় ফিরতে বাধ্য করে।
৬ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সেনারা পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ে এবং লাহোর অভিমুখে অগ্রসর হয়। এমনকি তারা লাহোর বিমানবন্দরের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীর তীব্র প্রতিরোধের মুখে অগ্রযাত্রা থেমে যায়। লাহোরের চারপাশের প্রায় ৭০টি সেতু ভেঙে দিয়ে ভারতীয় সেনাদের অগ্রসর হওয়া বন্ধ করা হয়।
এ যুদ্ধে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট। মেজর (পরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি) জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ৪৬৬ জনের একটি ইউনিট লাহোর রক্ষায় অংশ নেয়। তাঁর নেতৃত্বে রেজিমেন্টটি তিনটি ‘সিতারা-ই-জুররাত’, নয়টি ‘তমঘা-ই-জুররাত’ অর্জন করে এবং জিয়াউর রহমান ব্যক্তিগতভাবে পান ‘হিলাল-ই-জুররাত’ পদক।
আজ সেই ঐতিহাসিক দিনের ৬০ বছর পূর্ণ হলো। ইতিহাসবিদরা মনে করেন, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এই অবদান কেবল পাকিস্তানের সামরিক ইতিহাসেই নয়, বরং পরবর্তীতে বাংলাদেশের মুক্তিকামী চেতনাকে আরও জোরদার করেছিল।