রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ৫ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) এক অশ্রুতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়ভাবে পরিচিত নুরুল পাগলার কবর থেকে লাশ তুলে পেটানোর পর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রসঙ্গত, নুরুল পাগলা গত ২৩ আগস্ট মারা যান। মৃত্যুর পর তাঁর পরিবার তাকে বিশেষ কায়দায় ১২ ফুট উঁচু বেদিতে দাফন করে, যা কা’বা শরিফের আদলে নির্মাণ করা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকেই স্থানীয় মুসল্লি ও উলামায়ে কেরামের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
প্রশাসনের সাথে আলোচনার পরও সমাধান হয়নি
স্থানীয় প্রশাসনের সাথে একাধিক বৈঠক হয়, যেখানে কবরের কাঠামো ভেঙে সমান করার দাবি জানানো হয়। জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। তবে পরিবার অনড় থাকায় পরিস্থিতি জটিল আকার নেয়। বৃহস্পতিবার বিভিন্ন সংগঠন আল্টিমেটাম দিয়ে শুক্রবার বিক্ষোভ ও “মার্চ ফর গোয়ালন্দ” কর্মসূচি ঘোষণা করে।
আজকের ঘটনাপ্রবাহ
প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বিক্ষোভ মিছিল থেকে একদল লোক শাবল, হাতুড়ি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে নুরুল পাগলার বাড়ির দিকে রওনা দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আলেমরা নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেও তারা থামেনি। পরে সংঘর্ষের মধ্যে কবর ভেঙে লাশ তুলে নেওয়া হয় এবং ভিডিওতে দেখা গেছে, সেটি পেটানোর পর পুড়িয়ে ফেলা হয়। এসময় পুলিশের গাড়ি ও উপজেলা প্রশাসনের গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ও জনঅসন্তোষ
ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ বলছেন, কা’বার আদলে কবর নির্মাণ ইসলামসম্মত নয়, তবে কবর থেকে লাশ তুলে পুড়িয়ে দেওয়া আরও বড় শিরক ও গর্হিত কাজ। ইসলামে মৃতদেহের মর্যাদা রক্ষার কড়াকড়ি বিধান রয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে: “আমি তো আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি।” তাই লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা কোনোভাবেই বৈধ নয়।
সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু প্রশাসন
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জনরোষ বোঝা সত্ত্বেও প্রশাসনের তড়িৎ উদ্যোগ গ্রহণে ব্যর্থতা এই পরিস্থিতিকে ভয়াবহ রূপ দিয়েছে। ফলে একদিকে নুরুল পাগলার পরিবারের বাড়াবাড়ি, অন্যদিকে উত্তেজিত জনতার সীমালঙ্ঘন—দুই পক্ষের আচরণই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঠেলে দিয়েছে।
ঘটনাটি এখন রাজবাড়ীতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু, এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এমন অমানবিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রশাসন ও ধর্মীয় নেতৃত্বকে দ্রুত সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।