রাজধানীর উত্তরার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিমানবন্দর থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত এলাকা এখন ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা। এতে পথচারী, স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
সাম্প্রতিক তদন্তে জানা গেছে, উত্তরায় সংঘটিত অপরাধের অধিকাংশই ঘটাচ্ছে পার্শ্ববর্তী গাজীপুর ও টঙ্গী এলাকার বেকার যুবকরা। বিশেষ করে পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বিপুলসংখ্যক শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। শিল্প পুলিশের তথ্যমতে, গত এক বছরে গাজীপুরে ৭২টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে, যার মধ্যে গত ছয় মাসেই ২৯টি। অনেকে বিকল্প জীবিকার সন্ধান পেলেও অনেকে হতাশ হয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। গাজীপুরের নিকটবর্তী হওয়ায় এর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ছে উত্তরায়।
স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যার পর উত্তরার রাস্তায় বের হওয়াই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। অলি-গলিতে ছিনতাইকারীরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সক্রিয় থাকে। সুযোগ পেলে দিনের বেলাতেও তারা অপরাধ করছে। এ ছাড়া হঠাৎ বেড়ে যাওয়া অটোরিকশা চালকদের মধ্যেও অনেকে রিকশার আড়ালে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ী কামরুল হাসান বলেন, “গাজীপুরে কারখানা বন্ধ হওয়ার পর থেকেই এর প্রভাব উত্তরে পড়তে শুরু করেছে। প্রতিদিন দোকানে চুরি হচ্ছে, পথচারীরা ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন। পুলিশ আছে, কিন্তু অপরাধীদের সংখ্যা এত বেশি যে নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ছে।”
আরেক বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম জানান, “গাজীপুর থেকে আসা বেকার যুবকেরা উত্তরায় সক্রিয় হচ্ছে কারণ এখানে প্রচুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও নগদ অর্থের লেনদেন হয়।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সমস্যা সাময়িক নয়। তাদের মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ছাড়া এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আবু তালহা বিন রেদওয়ান বলেন, “হঠাৎ বেকারত্ব বাড়লে তা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। উত্তরা এখন তার প্রকট উদাহরণ।”
উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মহিদুল ইসলাম জানান, ছিনতাই প্রতিরোধে বিশেষ টিম ও টহল দল নিয়মিত মাঠে কাজ করছে। তার ভাষ্যে, “বেকারত্ব ও মাদকাসক্তিই যুবকদের অপরাধের মূল কারণ। প্রতিদিনই একাধিক ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। উত্তরা এখন নিয়ন্ত্রণে আছে, তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে নানা কৌশল অবলম্বন করতে হচ্ছে।”