২০০৫ সালের ১৭ নভেম্বর পুলিশের এসআই ও সার্জেন্ট পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। লিখিত, শারীরিক, ভাইভা, মেডিকেল ও ভেরিফিকেশনসহ সব পরীক্ষা শেষ করে ২০০৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ৭৫৭ জন প্রার্থী চূড়ান্ত তালিকায় নাম লেখান। সারদায় প্রশিক্ষণে যোগ দেওয়ার অপেক্ষায়ও ছিলেন তারা।
কিন্তু বিশেষ গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে পুরো ব্যাচের নিয়োগ বাতিল করা হয়। তৎকালীন আইজিপি নূর মোহাম্মদ ও বেনজীর আহমেদের সিদ্ধান্তেই এ আদেশ কার্যকর হয়। এরপর থেকে গত ১৭ বছর তারা বারবার দাবি তুললেও আওয়ামী শাসনামলে মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন বা রাজপথে নামার সুযোগ পায়নি। পুলিশ বাধা দিয়েছে, কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। অনেকের বয়সসীমা পেরিয়ে গেছে, কেউ মারা গেছেন, কেউ জীবিকার জন্য অন্য কাজে যুক্ত হয়েছেন।
চব্বিশের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে প্রার্থীরা আবার নতুন আশায় বুক বাঁধেন। তারা প্রধান উপদেষ্টা, সচিবালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরে স্মারকলিপি জমা দেন। পরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে। সেখানে জানানো হয়, বর্তমানে মোট ৩৩০ জন পুনরায় চাকরিতে যোগ দিতে আগ্রহী।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরে চিঠি পাঠায়, যাতে নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং জ্যেষ্ঠতা ও আর্থিক সুবিধাসহ পুনর্বহালের বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়। আইন মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি পর্যালোচনা করে জানায়, ২০০৭ সালে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ বাতিল হলেও হাইকোর্ট রায়ের আলোকে বয়স শিথিলের সুযোগ দেওয়া হয়নি। ১৯৯১ সালে বাতিল হওয়া এসআইদের ১৯৯৭ সালে বয়স প্রমার্জন করে পুনর্বহাল করা হয়েছিল; একই প্রক্রিয়া এ ক্ষেত্রেও অনুসরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
তবে এবার প্রায় ১৮ বছরের বয়স প্রমার্জন প্রয়োজন হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় মত দিয়েছে, বিশেষ ব্যাচ হিসেবে বিবেচনা করে ট্রেনিং ও মেডিকেল বোর্ডে উত্তীর্ণ হওয়ার শর্তে নতুন পদ সৃষ্টি করে তাদের নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। এজন্য আলাদা বিধিমালা প্রণয়নের সুপারিশও করা হয়।
তবুও নানা প্রশাসনিক জটিলতায় এখনও তাদের ভাগ্য ঝুলে আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি একটি অফিস আদেশ জারি করে বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠিয়েছে। তবে এ নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।