নেপালে জেনজি বিদ্রোহ ঘিরে যখন আলোচনার ঝড় বইছে, তখন সামনে এসেছে একাধিক প্রশ্ন। উপমহাদেশে যেসব নেতারা একসময় ক্ষমতার শিখরে ছিলেন, তারা এখন একে একে ক্ষমতাচ্যুত।
শ্রীলঙ্কার গোতাবায়া রাজাপাকসে ২০২২ সালের জুলাইয়ে তিন মাসের আন্দোলনের পর ক্ষমতা হারান। বাংলাদেশের শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের আগস্টে মাত্র ১৫ দিনের মধ্যেই ক্ষমতাচ্যুত হন। আর সর্বশেষ ২০২৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নেপালের কেপি শর্মা ওলি মাত্র দুই দিনের আন্দোলনে বিদায় নেন।
ভারতের হিন্দুস্তান টাইমস এক বিশ্লেষণে বলেছে— শেখ হাসিনা, রাজাপাকসে, ওলি ও ইমরান খান— সবাই একসময় দক্ষিণ এশিয়ার প্রভাবশালী শাসক ছিলেন। কিন্তু এখন কেউ নির্বাসিত, কেউ বা কারাগারে।
তাদের গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিদ্রোহের ডিজিটাল পূর্বাভাস ধরতে পারেনি। টিকটক, ডিসকর্ড, ভাইবার, ফেসবুকের মতো অ্যাপস আন্দোলনের বড় হাতিয়ার হয়ে ওঠে। এর পেছনে ছিল অদৃশ্য “এলগরিদমের পুতুলনাচ”, যাদের অবস্থান হয়তো পশ্চিম ইউরোপ, রাশিয়া, চীন বা অন্য কোথাও।
রাজাপাকসে, শেখ হাসিনা ও ওলি— তিনজনই পশ্চিমবিরোধী ছিলেন এবং চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছিলেন। রাজাপাকসে হম্বানটোটা বন্দর, হাসিনা চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের বিষয়ে আলোচনা, আর ওলি চীনা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ— সবাই চীনের দিকে ঝুঁকেছিলেন। অথচ পতনের ঠিক আগে পর্যন্তও এর আভাস পাননি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার এই রাজনৈতিক অস্থিরতার মূল কারণ দুর্বল শাসনব্যবস্থা, যুব বেকারত্ব, পশ্চিমা জীবনধারার মোহ এবং সর্বোপরি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দুর্নীতি।
এ যুগে এলগরিদম, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও ডীপফেক প্রযুক্তির কারণে রাজনৈতিক উত্তেজনা ঠেকানো প্রায় অসম্ভব। আরব বসন্ত ও আইএসআইএসের উত্থান যেমন দেখিয়েছে— বিশৃঙ্খলা থেকে আরও বড় বিশৃঙ্খলার জন্ম হয়। যেখানে পুরনো নেতৃত্ব ভেঙে পড়ে, আর নতুনরা শাসন টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়।