সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন কোনোভাবেই মিউচ্যুয়ালি ইন্টারডিপেন্ডেন্ট নয় মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সংস্কার সংস্কারের মতো চলবে, এটা কন্টিনিউয়াস প্রসেস। বিচারেও টাইম লিমিট করা যায় না, তাতে অবিচার হবে। সেটা চলবে, যে সরকারই আসুক। কিন্তু নির্বাচনকে এটা কন্ডিশনাল করা যাবে না। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে রিজিউনাল সিকিউরিটির জন্য থ্রেড হতে পারে।
রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে একথা বলেন তিনি।
গত ১৫ বছরে আওয়ামী আমলে বিএনপি সবচেয়ে বেশি অবিচারের শিকার হয়েছে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা গুম-হত্যা-নির্যাতনের শিকার হয়েছি। বিচার চলবে, এটা আমাদের কমিটমেন্ট, জাতির কমিটমেন্ট। কিন্তু নির্বাচনকে এটা কন্ডিশনাল করা যাবে না। আর যদি ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যেকোনো করম একটা অনিশ্চিত পরিবেশ সৃষ্টি হয়, সেটা ফ্যাসিবাদ চেষ্টা করছে।
আমরা যদি এমন কোনো কর্মকাণ্ড করি যে ফ্যাসিবাদী শক্তি সুযোগ পাবে, আস্কারা পাবে সেটা আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য অনেকে বলছেন, এটা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে। আমি বলছি, এটা রিজিউনাল সিকিউরিটির জন্য থ্রেড হতে পারে। এখানে দুইটা রিজিউনাল শক্তি, আমরা বাংলাদেশকে সেখানে নিতে চাই না। নির্ধারিত টাইম লাইনে নির্বাচন হতেই হবে।
অনেকগুলো বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য পৌঁছার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আরও অনেকগুলো বিষয়ে সংস্কারের প্রয়োজন আছে, যেগুলো হয়তো আপনারা সময়ের অভাবে ট্রেস করতে পারেননি। সেগুলো জাতিকে সামনে ট্রেস করতে হবে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে সংবিধান সংক্রান্ত সংস্কারের কথা তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এখানে ১৯টি মৌলিক বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছে। বাস্তবে মৌলিক বিষয় আরও অনেক আছে। আমরা ৮২৬টি ছোট-বড় সংস্কার প্রস্তাব পেয়েছি। এগুলো দলে আলোচনা করে লিখিত মতামত দিয়েছি। মাত্র ৫১টি প্রস্তাবে আমরা দ্বিমত করেছি, ১১৫টি প্রস্তাবে আমাদের মতামতসহ ভিন্নমত দিয়ে গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছি। এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঐকমত্য হয়েছে প্রায়। মৌলিকগুলো নিয়ে ৮৪৫টি সংস্কার প্রস্তাব হয়।
ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা এবং শক্তিতে রূপান্তরিত করতে আরও বেশি নেগোশিয়েট করার কথা তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা কম্প্রোমাইজ করবো। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কোনো পন্থা বের করতে পারলে তাতে একমত হবো। প্রস্তত করা চূড়ান্ত জুলাই সনদে ক্লারিক্যাল মিসটেক এবং কিছুটা বিভ্রান্তি আছে। এটা আমরা কারেকশন করে দিবো, এটা মেজর কিছু নয়। তবে এটি জাতীয় দলিল, রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল, ঐতিহাসিক দলিল হবে, সেজন্য এটা নির্ভুল হওয়া বাঞ্ছনীয়। যেসব বিষয়গুলো আলোচিত হয়নি, সেগুলো এতে অন্তর্ভুক্ত করা ঠিক হবে না। বিতর্ক যত কম করা যায়।
সালাহউদ্দিন বলেন, কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না, তেমন কোনো দলিল হতে পারে না, সংবিধানের ওপর সনদকে স্থান দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। এর বাইরেও অনেক পন্থা থাকতে পারে যাতে আমরা এটার বৈধতা দিতে, আইনি ভিত্তি দিতে পারি। আপিল বিভাগের পরামর্শ নিতে পারি আমরা, এটা এক্সট্রা কনিস্টিটিউশনাল অর্ডার বা স্পেশাল কনিস্টিটিউশনাল অর্ডার করা যায় কিনা। তাহলে ভবিষ্যতে জুডিশিয়ালিতে এটা চ্যালেঞ্জ করলেও বলতে পারবে আমরা মতামত নিয়েছিলাম। এখন সেই পরামর্শ আপনারা দিতে পারেন, নাও পারেন।
স্পেশাল কনিস্টিটিউশনাল অর্ডারে আপনি করলেন। আমরা কেউ কিছু বললাম না। ঐকমত্য কমিশন থেকে আমরা আপনাকে দায়িত্ব দিলাম, সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে আপনি সিদ্ধান্ত দেন। তারপর আপনি করলেন। কিন্তু যেকোনো একজন নাগরিক যদি এটা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করে কোথাও যায়, সেটা আপনার গ্লোবাল রিপোটেশন নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। আমরা অনেক আলোচনা করেছি, সেখান থেকে আপনি কোনো মতামত নিতে পারে। সেই স্বাধীনতা আপনার আছে।