বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল পাঁচটি ইসলামি ধারার ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ উদ্যোগে ইতোমধ্যেই সরকারের সম্মতি পাওয়া গেছে। এবার ‘ব্যাংক রেজুলেশন অর্ডিন্যান্স’ অনুযায়ী এসব ব্যাংকে অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার এ বিষয়ে একটি বিশেষ বোর্ড সভা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, প্রতিটি ব্যাংকে একজন করে অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হবে। তাদের সহযোগিতায় আরও চারজন করে সদস্য থাকবেন।
একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংক হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্যে চারটি ব্যাংক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে এবং এক্সিম ব্যাংক পরিচালনা করেন নজরুল ইসলাম মজুমদার, যিনি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এসব ব্যাংকে ব্যাপক অনিয়মের কারণে ঋণ খেলাপির হার দাঁড়িয়েছে ৪৮ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত।
একীভূতকরণে প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা দেবে সরকার। নতুন ব্যাংকের মূলধন দাঁড়াবে ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা, যা দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে প্রক্রিয়া শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে এবং এ জন্য একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন ব্যাংকটির অনুমোদন দেবে এবং সম্ভাব্য নাম রাখা হতে পারে “ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক”। সরকারের মূলধনে গঠিত এই ব্যাংকের অধীনে পাঁচ ব্যাংকের সম্পদ ও দায় স্থানান্তর হবে। পরবর্তীতে ব্যাংকটি মুনাফায় গেলে শেয়ার বেসরকারি খাতে ছাড়বে সরকার। বড় আমানতকারীদের শেয়ার দেওয়ার প্রস্তাব করা হবে, আর ছোট আমানতকারীরা চাইলে সহজে টাকা তুলতে পারবেন। এতে গ্রাহকদের আস্থা ফেরানো সম্ভব হবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগে এ মাসের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণ বিষয়ে শুনানি করে। সেখানে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক সরাসরি সম্মতি জানায়। তবে এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক কিছুটা সময় চায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশি-বিদেশি নিরীক্ষা প্রতিবেদন দেখিয়ে জানিয়ে দেয়, একীভূত হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে আসেন অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। দায়িত্ব নিয়ে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর সংস্কারের অংশ হিসেবে এই একীভূতকরণ উদ্যোগ নেন। সম্প্রতি তিনি বলেছেন—“ব্যাংক একীভূত হবেই, এতে আতঙ্কের কিছু নেই। আমানত নিরাপদ থাকবে, সরকার এর দায়ভার নেবে।”