সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বাংলাদেশে পরবর্তী নির্বাচন মাত্র মাস পাঁচেকের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে পরপর তিনটি নির্বাচনে ভারতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি অভিযোগ আছে, ভারতের সমর্থনেই শেখ হাসিনা সরকার সেই নির্বাচনে জিততে পেরেছে। এবার পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারতের মনোভাব কী হতে পারে, বা দ্বিপাক্ষিক স্বার্থে ঠিক কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে।
গত এক বছরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বারবার বলেছেন, তারা চায় বাংলাদেশে যত দ্রুত সম্ভব একটি সুষ্ঠু, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হোক। কিন্তু বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ, তাই তারা কি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে, তা স্পষ্ট নয়। ভারতের মধ্যে এখনো এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে যে, আওয়ামী লীগবিহীন কোনো নির্বাচনকে তারা অন্তর্ভুক্তিমূলক মনে করবে কি না।
দিল্লির ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে (আইআইসি) সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় বিশ্লেষকরা ভারতের সম্ভাব্য মনোভাব নিয়ে নানা মতামত প্রকাশ করেছেন। সাবেক সিভিল সার্ভেন্ট জহর সরকার মনে করেন, ভারতের উচিত এখন অপেক্ষা করা এবং নির্বাচন ফলাফল দেখেই নীতি স্থির করা। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ভোটার যাকেই নির্বাচিত করবে, তাকে মেনে নিতে হবে।”
অপরদিকে, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা মনে করেন, ভারতের স্বার্থবিরোধী কোনো সরকার ক্ষমতায় এলে তার সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে আগাম সতর্ক থাকা জরুরি। তিনি বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয় ভারতের জন্য কখনোই সম্পূর্ণ অ-সংক্রান্ত নয়।”
ভারতের মূল নীতি হলো অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চাওয়া, যা মানে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ থাকা উচিত। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ হয়তো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না এবং ভারতেরও তা বাস্তবতা হিসেবে মেনে নেওয়া উচিত।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো জামায়াতে ইসলামী। বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় তারা শক্তিশালী হচ্ছে। ভারতের মধ্যে কিছু পর্যবেক্ষক মনে করছেন, জামায়াত এখন একটি নতুন চেহারার দল। তবে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শ্রিংলা মনে করেন, জামায়াতের অতীতের কর্মকাণ্ডে রক্ত লেগে আছে, তাই ভারতের জন্য তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা সীমিত।
সারসংক্ষেপে, বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভারতের জন্য এক জটিল ও সংবেদনশীল চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ভারতের নীতি নির্ধারণে এই পরিস্থিতি বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।