ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ভরাডুবির পর নেতৃত্বে পরিবর্তনের গুঞ্জন উঠেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে। এ ক্ষেত্রে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় এবং এক নম্বর ইউনিট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার কমিটিতে নতুন নেতৃত্ব আসতে পারে। তবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে কমিটি ভাঙা নিয়ে পদপ্রত্যাশীদের মাঝে সংশয়ও বিরাজ করছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্রশিবিরের কাছে ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল বিপুল ব্যবধানে হেরেছে; যা শুধু ছাত্রদলের জন্য নয়, বিএনপির জন্যও অশনি সংকেত। দেশে প্রায় ৫ কোটি তরুণ ভোটার, তাদের কাছে প্রভাব হারালে জাতীয় নির্বাচনে ফলাফলেও প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া ডাকসুর আগে প্যানেল গঠনে অসন্তোষ, নির্বাচনের দিন ভিসির সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণসহ নানা কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়।
৫ আগস্ট পরবর্তী সময়েও ক্যাম্পাসে প্রত্যাশামতো উপস্থিত হতে পারেনি ছাত্রদল, যেখানে ছাত্রশিবির সংগঠনমূলক কার্যক্রমে এগিয়ে গেছে। পাশাপাশি কমিটি গঠন নিয়ে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ সংগঠনের ভেতরে ক্ষোভ বাড়িয়েছে। এসব কারণে সংগঠনের স্থবিরতা কাটাতে নতুন নেতৃত্বের চিন্তা চলছে, যদিও জাতীয় নির্বাচন সামনে থাকায় দ্রুত তা বাস্তবায়ন না-ও হতে পারে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ডাকসু-জাকসু নির্বাচনে ব্যর্থতার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একাধিক ভার্চুয়াল সভা করেছেন। এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভাতেও এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। ইতোমধ্যে ছাত্রদলের নিষ্ক্রিয়তা, কমিটিহীন শাখায় কমিটি দেওয়া ও ২০টি জেলা কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। যদিও নেতাদের নির্দেশনা ছিল—কেন্দ্র ও ঢাবি কমিটি ভাঙা নিয়ে আপাতত না ভাবতে।
তারপরও পদপ্রত্যাশীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। অনেকেই নিজেদের সিভি ও কর্মযজ্ঞের বর্ণনা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ধারণা, চলতি মাসেই কেন্দ্র ও ঢাবি শাখায় নতুন নেতৃত্ব আসতে পারে। আলোচনায় রয়েছেন ঢাবির ২০১০-১৩ সেশনের একাধিক নেতা, যেমন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারহান মো. আরিফুর রহমান, সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক, যুগ্ম সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ ও তারিকুল ইসলাম তারেক। এছাড়া বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসানও আলোচনায় আছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় ২০১৩-১৬ সেশনের নেতাদের মধ্যে নতুন নেতৃত্ব আসতে পারে বলে জানা গেছে। আলোচনায় রয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমাম আল নাসের মিশুক, আল আমিন, জসিম খান, বিএম কাওসার, ফেরদৌস আলম, সাইফ খান, আলমগীর হোসেন, আকিব জাবেদ রাফি, মিনহাজুল ইসলাম নয়ন, বজলুর রহমান বিজয়, নুরুল আমিন নুর ও আখতারুজ্জামান বাপ্পি। এছাড়া ডাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া আবিদুল ইসলাম খান, আরিফুল ইসলাম, হামিম বারী, মেহেদী হাসান ও জুলফিকার জিসানকেও নেতৃত্বের জন্য বিবেচনা করা হতে পারে।
একজন বিএনপি শীর্ষ নেতা জানান, ছাত্রদল ঘিরে নানা সমালোচনা আছে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সিনিয়র নেতারা নেবেন। অন্যদিকে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আপাতত আলোচনা শুরু হয়নি, তবে ত্রুটি-বিচ্যুতি বিবেচনায় যেকোনো সময় পরিবর্তন আসতে পারে।