একযোগে রাজপথে নেমেছে জামায়াতে ইসলামীসহ অন্তত সাতটি দল। দলগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো জোট দাবি না করলেও, তারা কি বিএনপির বিরুদ্ধে একত্রিত হচ্ছে—এ প্রশ্ন উঠেছে। আন্দোলনে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে আছে কয়েকটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন এবং তাদের দাবিগুলোও অনেকটিই সাদৃশ্যপূর্ণ।
প্রধান দাবিগুলো: জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন, আনুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ, লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করা, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে বিচার দাবি এবং জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার মতো বিষয়। এসব দাবিতে একাধিক দল একই দিনে কর্মসূচি পালন করেছে। (সূত্র: বিবিসি বাংলা)
অনেকে প্রশ্ন করছেন—হঠাৎ করে এই আন্দোলন কেন এবং কোন উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। আন্দোলনের নির্দিষ্ট কিছু দাবিতে বিএনপির অবস্থান ভিন্ন হওয়ায় সন্দেহ দেখা দিয়েছে যে, এ কর্মসূচি দিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে একটি শক্তি দৃশ্যমান করার চেষ্টা হতে পারে। আন্দোলন গঠনের কথা বলা দলগুলো নিজেদের জোট করার দাবি অস্বীকার করলেও, বিএনপি এটিকে ‘অস্থিরতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা’ হিসেবে দেখছে।
রাজপথে কর্মসূচি ও আন্দোলন নিয়ে আশঙ্কা আছে যে, এটি ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার বাইরে গিয়ে সংঘাতের উত্তরণ ঘটাতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন—কারও ওপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে সেটা জনগণের প্রতি আস্থার অভাব প্রকাশ করবে। তিনি বলেন, ঐকমত্য প্রক্রিয়া চলাকালে রাস্তায় কর্মসূচি নেওয়া হলে তা উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক অস্থিরতা করে নির্বাচনের তফসিল পিছিয়ে যেতে পারে—এমন আশঙ্কা করার কথাও শোনা যায়। বর্তমানে নির্বাচনের সময় অপ্রচলিত পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষণা না করলে নির্বাচন কমিশনকে তিন মাসের মধ্যে তফসিল কার্যকর করার নিয়ম অনুসরণ করতে হবে; তাই বাকি সময়ও খুব কম। নির্বাচনী পথে রাজনৈতিক দলের অনুপস্থিতি—বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য অনুপস্থিতি—এক ধরনের শূন্যতা তৈরি করেছে, যা প্রভাব ফেলতে পারে ভোটার ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার পরিস্থিতিতে।
টার্গেট বিএনপি?
আন্দোলনে মূলত অংশ নিচ্ছে: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জামায়াতে ইসলামী, খেলাফতে মজলিসের দুটি অংশ, নেজামে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা। এসব দল আগে থেকেই কিছু দাবিতে সমমত পোষণ করেছে এবং মাঠে একই ধরনের কর্মসূচি নিয়েছে। কিন্তু এসব দাবি—বিশেষ করে পিআর পদ্ধতি, জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধকরণ ইত্যাদি—নিয়ে বিএনপির সঙ্গে মতানৈক্য রয়েছে। বিএনপির কৌশল হচ্ছে, যেখানে ঐকমত্য হচ্ছে না সেখানগুলো ভোটের ময়দানে জনগণের কাছে নেয়া; এবং সাংবিধানিক সংস্কারগুলো পরবর্তী সংসদে গ্রহণ করার কথাই বলছে দলটি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াতসহ এসব দল মাঠে এনে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে চাইছে—এবং একই সঙ্গে বিএনপির বিপরীতে একটি দৃশ্যমান শক্তি গঠনের চেষ্টা চলছে। ফলত, চলমান আন্দোলন ও কর্মসূচি শুধু সরকারের প্রতি চাপ নয়, তা বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থানকে চ্যালেঞ্জও করে তুলতে পারে।