ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সক্রিয় হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচনের পদ্ধতিগত সংস্কার, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও পিআর পদ্ধতি চালুর দাবির পাশাপাশি দলটি নিজস্ব প্রস্তুতিও জোরদার করেছে। প্রাথমিকভাবে সব আসনে প্রার্থী দিয়ে আগেভাগেই গণসংযোগ শুরু করেছে জামায়াত। পাশাপাশি সরকার গঠনের লক্ষ্য সামনে রেখে ইসলামী ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কৌশল নিয়েছে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন দফায় যোগাযোগ ও বৈঠক করছে দলটির শীর্ষ নেতারা।
এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নির্বাচনি জোট গঠন হয়নি। তবে জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে জামায়াতের সঙ্গে অন্তত ৯টি দল একমত হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন এবং জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার মতো ইস্যুতেও সমর্থন মিলেছে। এর অংশ হিসেবে জামায়াতসহ সাতটি দল ইতোমধ্যেই অভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে। ঢাকা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে যৌথ বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করেছে তারা।
সূত্র বলছে, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, জাগপা ও নেজামে ইসলাম পার্টি নির্বাচনি সমঝোতার ব্যাপারে আশাবাদী। পাশাপাশি ইসলামী ঐক্যজোট, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ কয়েকটি দলকেও এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার চেষ্টা চলছে।
তবে অনেক দলই এখনও সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে—তারা ক্ষমতায় যাওয়া, বিরোধী দলে থাকা কিংবা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা হিসাব করছে। নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর বা কাছাকাছি সময়ে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি ডাকসু-জাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের নিরঙ্কুশ জয় এবং ছাত্রদলের ভরাডুবি ইসলামী জোটের মধ্যে নতুন আশা তৈরি করেছে। খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, তরুণ প্রজন্মের এ অভিমত জাতীয় নির্বাচনেও প্রভাব ফেলবে এবং জোট গঠনের প্রক্রিয়া আরও গতিশীল হবে।
অন্যদিকে, এবি পার্টি, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ ও আপ বাংলাদেশকে নিয়ে একটি আলাদা মোর্চা তৈরির আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। পরে তারা বড় কোনো জোটের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে পারে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জানিয়েছেন, নির্বাচনি জোটের বিষয়ে আলোচনা চলছে, তবে রূপরেখা এখনও হয়নি। এহসানুল মাহবুব জুবায়েরসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, ইসলামি ও সমমনা দলগুলোকে একত্রিত করে ইসলামপন্থি ভোট এক ঘরে আনার পরিকল্পনা রয়েছে, যা নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর চূড়ান্ত হবে।
ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান মনে করেন, নির্বাচন সংস্কারের দাবিতে অভিন্ন প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আসনভিত্তিক সমঝোতার মাধ্যমে জামায়াতকে কেন্দ্র করে জোট গঠিত হবে।
অন্য সমমনা নেতারাও বলছেন, জুলাই সনদের ভিত্তিতেই নির্বাচন হওয়া চাই। দাবি পূরণ না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। তবে বিএনপির সঙ্গে সরাসরি জোটের কোনো পরিকল্পনা নেই বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন বেশিরভাগ ইসলামি নেতারা।
সব মিলিয়ে, নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার আগে বা পরে ইসলামী ও সমমনা দলগুলো নতুন একটি জোটে একত্রিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তবে কোন দল নেতৃত্ব দেবে এবং কাদের সঙ্গে সমঝোতা হবে—তা নির্ভর করবে আসন্ন রাজনৈতিক সমীকরণের ওপর।