রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্য কোটা পুনর্বহালকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণার পর শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১০টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীবের বাসভবনের গেট ভাঙার চেষ্টা করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনশনে থাকা শিক্ষার্থীরা একত্র হয়ে ভিসির বাসভবনে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এসময় গেট ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, উপাচার্য তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সংলাপে বসেননি।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, “কোনো বিশৃঙ্খলা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু ৪০ ঘণ্টা ধরে অনশনে আছি। অথচ ভিসি স্যার কোনো দায়িত্বশীল আচরণ দেখাননি। আজ যদি আমরা মারা যাই, দায়ভার নকীব স্যারের।”
আরেক অনশনরত শিক্ষার্থী বলেন, “৪০ ঘণ্টা ধরে না খেয়ে আছি। এইখানেই লাশ হবো, তারপর দেখবো ভিসি বের হন কিনা।”
প্রশাসন অবরুদ্ধ, নারী শিক্ষার্থীদের সংহতি
আন্দোলনকারীরা জানায়, তারা জুবেরি ভবনে সাড়ে ছয় ঘণ্টা ধরে অবস্থান করছেন। সেখানে উপউপাচার্য, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও জনসংযোগ কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ছাত্রী হল থেকে মিছিল বের করে নারী শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে সংহতি জানান।
আন্দোলনের পটভূমি
গত বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ভর্তি কমিটির সভায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য শর্তসাপেক্ষে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পর থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন বিক্ষোভ শুরু করে।
প্রথমে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করা হয় এবং রাত পর্যন্ত আন্দোলন চলে। পরদিন শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এর পর থেকেই কয়েকজন শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেন। বর্তমানে নয়জন শিক্ষার্থী অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন, যাদের মধ্যে দুইজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা
এ ঘটনার প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের নেতৃত্বে শিক্ষক সমাজ আজ রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এখন চরম উত্তেজনায় রয়েছে। প্রশাসন ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাত আরও বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।