ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফেসবুকে মতামত প্রকাশের পর ছাত্রলীগের নির্যাতনে প্রাণ হারান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। তার স্মৃতিকে ধারণ করতে রাজধানীর পলাশী মোড়ে নির্মিত হয়েছিল ‘আগ্রাসনবিরোধী আট স্তম্ভ’। কিন্তু সে কাঠামো ভেঙে ফেলে তৎকালীন শেখ হাসিনা প্রশাসন। পরে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয়, যা বর্তমানে চলমান।
রোববার পলাশী মোড়ে ৮ ফলকবিশিষ্ট স্তম্ভের নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক। আখতারের নেতৃত্বেই ২০২০ সালে ‘আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদ’-এর ব্যানারে প্রথমবারের মতো এই স্তম্ভ নির্মিত হয়।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে তড়িৎকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনার পর থেকেই তার স্মৃতিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রতিবাদ ও প্রতীকী নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
স্তম্ভ পুনর্নির্মাণের অগ্রগতি নিয়ে ফেসবুকে ছবি শেয়ার করে আখতার হোসেন লিখেছেন—
“শহীদ আবরার ফাহাদ আমাদের অনুপ্রেরণা। তার শাহাদাতের প্রথম বার্ষিকীতে আমরা কিছু তরুণ ভয়ভীতি উপেক্ষা করে পলাশীর মোড়ে ‘আগ্রাসনবিরোধী আট স্তম্ভ’ নির্মাণ করেছিলাম। সেদিন আমাদের শপথ ছিল, এই বার্তা সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “প্রথম নির্মাণের দিনই স্বৈরাচারী প্রশাসন ভেকু মেশিন দিয়ে স্তম্ভ ভেঙে ফেলে। প্রতিবাদে বাঁশ দিয়ে নতুন স্তম্ভ তৈরি করি, সেটিও ধ্বংস করা হয়। কিন্তু আমরা হাল ছাড়িনি।”
এবার সরকারি উদ্যোগে স্থায়ীভাবে নির্মিত হচ্ছে এই ‘আগ্রাসনবিরোধী আট স্তম্ভ’। উদ্যোগ বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
এই আটটি স্তম্ভ প্রতীকীভাবে দাঁড় করানো হচ্ছে—
১. সার্বভৌমত্ব
২. গণতন্ত্র
৩. গণপ্রতিরক্ষা
৪. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি
৫. অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা
৬. দেশীয় শিল্প ও কৃষি রক্ষা
৭. নদী, বন ও বন্দর সুরক্ষা
৮. সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ও মানবিক মর্যাদা
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ অনেকে স্তম্ভ পুনর্নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এখন সেটিই বাস্তবে রূপ পাচ্ছে।