মানুষের মতো পশুর শরীরেও নানা ধরনের জীবাণু প্রবেশ করতে পারে, যা বিভিন্ন রোগের কারণ হয়। এসব জীবাণুকে নিয়ন্ত্রণ বা ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয় অ্যান্টিবায়োটিক।
চিকিৎসকরা রোগের ধরন অনুযায়ী নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক ও পূর্ণ কোর্স অনুসরণের পরামর্শ দেন। এতে ব্যাক্টেরিয়া মারা যায় বা তাদের বৃদ্ধি থেমে যায়। কিন্তু অনেক রোগী কয়েকদিন ওষুধ খেয়ে স্বস্তি পেলে কোর্স শেষ না করেই বন্ধ করে দেন। ফলে কিছু ব্যাক্টেরিয়া শরীরে বেঁচে থেকে ওষুধের শক্তি সম্পর্কে ধারণা পায় এবং ধীরে ধীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। এভাবেই জন্ম নেয় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স।
এই প্রতিরোধ শুধু আক্রান্ত রোগীর জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ নয়, বরং সংক্রমণের মাধ্যমে অন্যদের শরীরেও ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের বাজারে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের বড় অংশই এখন অনেকটা অকার্যকর হয়ে পড়ছে, যা ভয়াবহ সংকেত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গবেষকরা সতর্ক করে বলছেন, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ এখন বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকটে রূপ নিয়েছে। প্রতিবছর লাখো মানুষ এ কারণে মারা যাচ্ছেন। ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী অন্তত ১.২৭ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু সরাসরি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের সঙ্গে জড়িত ছিল। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা প্রায় চার কোটির কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।
বাংলাদেশসহ অনেক দেশে এখনো ফার্মেসি থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক কেনা যায়। ভাইরাসজনিত জ্বর, সর্দি-কাশির মতো রোগে অযথা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়, অথচ ভাইরাসের ক্ষেত্রে এসব ওষুধ একেবারেই অকার্যকর। পাশাপাশি মাত্রাতিরিক্ত বা ভুলভাবে ব্যবহার করলে দেখা দিতে পারে নানা জটিলতা— যেমন অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ কমে যাওয়া, শরীর দুর্বল হয়ে পড়া, ডায়রিয়া, পেটব্যথা কিংবা পেশিতে খিঁচুনি।
তাই অ্যান্টিবায়োটিক অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে ও নির্ধারিত কোর্স মেনে খেতে হবে। মাঝপথে কোর্স বন্ধ করলে বা অপব্যবহার চলতে থাকলে এমন দিন আসতে পারে, যখন জীবনরক্ষাকারী অ্যান্টিবায়োটিকও কাজ করবে না। তখন আমরা ফিরে যাব সেই যুগে, যখন একটি সাধারণ সংক্রমণও মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াত।