জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। দীর্ঘদিনের রেওয়াজ ভেঙে, তিনি কেবল উপদেষ্টাদের নয়—বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদেরও সঙ্গে নিয়ে অংশ নিয়েছেন এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে। এই পদক্ষেপকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও ঐকমত্যের এক শক্ত বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নিউইয়র্ক সময় শুক্রবার সকাল ৯টায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা) শুরু হওয়া অধিবেশনে ড. ইউনূস দশম বক্তা হিসেবে ভাষণ দেন। এ ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বিটিভি নিউজ এবং বাংলাদেশ বেতারে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যোগ দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির। এছাড়াও জামায়াত নেতা ড. নকিবুর রহমান তারেক অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।
ড. ইউনূস তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট করে বলেন, “বাংলাদেশ আর কখনো স্বৈরতন্ত্রের পথে ফিরবে না। সব রাজনৈতিক দল ও মতের অংশগ্রহণে গঠিত ঐকমত্যই গণতন্ত্র ও কাঠামোগত সংস্কারকে টেকসই করে তুলবে।”
তিনি আরও বলেন, “জনগণের আত্মত্যাগে অর্জিত ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা পুনর্গঠনের চলমান প্রক্রিয়াকে আর কোনো শক্তি থামাতে পারবে না। আমাদের লক্ষ্য হলো এমন একটি ভারসাম্যপূর্ণ অন্তর্বর্তী কাঠামো গড়ে তোলা, যেখানে রাষ্ট্র ও জনগণের রক্ষকরা আর কখনো ভক্ষকে পরিণত না হয়।”
বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ না রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের টাকা জনগণের কাছেই ফিরিয়ে দিতে হবে। এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা কামনা করেন তিনি।
ড. ইউনূস তাঁর ভাষণে আরও তুলে ধরেন ২০২৪ সালের জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, সেই সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি এবং রোহিঙ্গা সংকটের বাস্তবতা।
এই ভাষণ এবং প্রতিনিধিদলের কাঠামোকে রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তির এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।