ইসলাম শান্তি, ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির ধর্ম। ইসলামের শিক্ষা শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, সমগ্র মানবতার জন্য। এখানে সবাই সমান—কোনো বর্ণ, জাতি বা ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদ নেই। বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিশ্বমানবের জন্য ভ্রাতৃত্ব ও মানবকল্যাণের এক সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
কবির ভাষায়—
“শুধু আনসার মুহাজেরিনের নহে আজি সমাবেশ,
মহামানবের মহা-আহ্বানে মিলেছে সকল দেশ।
চরণে দলিনু অন্ধ যুগের বংশ অহংকার,
ভাই ভাই মিলি মুসলিম হতো এক মহাপরিবার।”
কোরআন ও হাদিসে ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা
আল্লাহ তায়ালা সূরা হুজুরাতের ১০ নম্বর আয়াতে বলেছেন—
“মুমিনরা তো পরস্পর ভাই ভাই। অতএব তোমাদের ভাইদের পারস্পরিক সম্পর্ক যথাযথভাবে ঠিক করে নাও। আর আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ হয়।”
আবার সূরা আলে ইমরান (আয়াত ১০৩)-এ বলা হয়েছে—
“তোমরা সবাই আল্লাহর রশিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো, বিচ্ছিন্ন হয়ো না। তোমরা শত্রু ছিলে, তিনি তোমাদের হৃদয়ে সম্প্রীতি দান করলেন এবং তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই হলে।”
রাসূলুল্লাহ (সা.) মুসলিম উম্মাহকে এক দেহের সঙ্গে তুলনা করেছেন। শরীরের একটি অঙ্গ কষ্ট পেলে পুরো শরীর অস্থির হয়ে ওঠে, তেমনি বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে মুসলমান নির্যাতিত হলে সমগ্র উম্মাহর কষ্ট পাওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেছেন—
“তোমরা হিংসা-বিদ্বেষে লিপ্ত হয়ো না, মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। আল্লাহর বান্দা হয়ে ভাই ভাই হয়ে থাকো।”
“মুসলমান মুসলমানের ভাই; সে তার ওপর জুলুম করবে না, তাকে লাঞ্ছিত করবে না, অবহেলা করবে না।”
“মুমিন একজন আরেকজনের জন্য প্রাচীরের ইটের মতো, যা একে অপরকে দৃঢ় করে তোলে।” (বুখারি)
বর্তমান প্রেক্ষাপট
আজ পৃথিবীর নানা প্রান্তে যুদ্ধ, রক্তপাত ও বিভেদে মানবতা ভুগছে। ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবপ্রেমের অভাবই এ অশান্তির মূল কারণ। বিশেষ করে গাজায় চলমান বর্বরতা বিশ্বের বিবেকবান মানুষকে ব্যথিত করছে, অথচ মুসলিম নেতাদের মধ্যে কার্যকর ঐক্য দেখা যাচ্ছে না।
করণীয়
ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় ভালোবাসা, সহানুভূতি ও মানবতাশীল হতে। যদি আমরা ইসলামের আলোকে জীবন গঠন করি, তবে সমাজে হিংসা-বিদ্বেষ, রেষারেষি ও অরাজকতা দূর হবে। আমাদের উচিত—
ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় করা,
মানুষের দুঃখ-কষ্টে পাশে দাঁড়ানো,
ভালোবাসা ও সহমর্মিতায় পৃথিবীকে শান্তির আবাস বানানো।
ইসলামি ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি বাস্তবে প্রতিষ্ঠিত হলে বিশ্ব হবে শান্তি, ভালোবাসা ও মানবতার সুন্দর আবাস।







