শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। যমুনার অভিমুখে কাকরাইল মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান করছেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। এই সংবাদ লেখা পর্যন্ত সরকারের উচ্চ মহল থেকে এখনো পর্যন্ত কোন তো আসেনি।
বুধবার বিকেলে এই ঘোষণা দেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষক শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের শিক্ষক ও ছাত্রদের উপর যে হামলা চালানো হয়েছে তার বিচার করতে হবে। ঘাতক পুলিশের বিচার করতে হবে।
এসময় শিক্ষার্থীরা -জেগেছেরে জেগেছে জবিয়ান জেগেছে, আমার ভাই অনাহারে -যমুনা কি করে, এসেছি যমুনায় -যাবো না খালিহাতে, এসব স্লোগান দেন। এসময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো-
আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০% শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে ;
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাট না করেই অনুমোদন করতে হবে;
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা।
এদিন সকাল ১১টায় তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে লং মার্চে শুরু করে শিক্ষক শিক্ষার্থী। লং মার্চটি গুলিস্থান, মৎস্য ভবন পার হয়ে কাকরাইল মসজিদের সামনে আসলে ১২.৪০ এর সময় পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে লং মার্চে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের উপর। এসময় ছত্রভঙ্গ করতে গরম পানি ছোড়ে। শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের উপর লাঠি চার্জ করে পুলিশ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক সহ শতাধিক আহত হয়েছেন। আহত প্রায় ৩০ শিক্ষার্থীরা ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তবে আহত ও চিকিৎসাধীন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সবার নাম পরিচয় জানা যায়নি। এদিন পুলিশের লাঠি চার্জে আহত হন জবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা পোস্টের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মাহতাব লিমন, জবি প্রেসক্লাবের সভাপতি সুবর্ণ আসসাইফ, দৈনিক সংবাদের মেহেদী হাসান, ঢাকা ট্রিবিউন প্রতিনিধি সোহান ফরাজী, ইত্তেফাকের নাজিদ, সাংবাদিক ওমর ফারুক জিলন। এছাড়া জবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা আহত হন।
এছাড়া শিক্ষকদের মধ্যে আহত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিন, ইংলিশ বিভাগের শিক্ষক নাসিরউদ্দিন, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক বেলাল হোসেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর নাইম সিদ্দিকি, প্রক্টর অধ্যাপক ড.তাজাম্মুল হক, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড.মোশাররফ হোসেন।
এদিন বিকাল ৩টার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.রেজাউল করিম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.সাবিনা শরমিন, ব্যাবসায় অনুষদের ডিন মঞ্জুর মোর্শের উপস্থিন হন।
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে উপাচার্যের নেতৃত্বে ট্রেজারার রেজিস্টার প্রক্টর শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সহকারী সচিব সাব্বির আমাদের সাথে আলোচনায় বসে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত কিংবা কোনো সংবাদ আসেনি।
এদিন জবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উপস্থিত হয়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সাথে উচ্চ শিক্ষার নামে প্রতারণা করা হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে জড়িত। সকল আন্দোলনে জবি সমৃক্ত ছিলো। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা যে সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা সেই সুযোগ সুবিধা থেকে বরাবরই বঞ্চিত। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সাথে উচ্চ শিক্ষার নামে প্রতারণা করা হয়।
তিনি বলেন, ৫ই আগস্ট এর পর থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের যে দাবি কিন্তু সরকার সে দাবি আমলে নিচ্ছে না। জবিয়ানদের এই আন্দোলনের শিক্ষক শিক্ষার্থীর সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিল আন্দোলনে পুলিশে যা হামলা চালিয়েছে এটা কখনোই ঠিক করেনি। তাদের বিচার হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, যেই সরকার শিক্ষার্থীদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আছে শিক্ষার্থীদের সাথে এমন আচরণ করতে পারে না এই সরকার।
অতি উৎসাহী হয়ে যারা আন্দোলন তাদেরকে বিচার করতে হবে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের যে দাবি আছে এ দাবি শিক্ষার্থীদের জন্য অবশ্যই ঘোষণা আসতে হবে।
তিনি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে আমি বলছি শিক্ষার্থীদের এই ন্যায্য দাবি দ্রুত মেনে নেয়া উচিৎ। দাবি আদায় না হওয়া মেনে নেওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলছে। চলবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড.তাজাম্মুল হক বলেন, আমার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। আমার সহকারী প্রক্টরের উপর পুলিশ আঘাত করেছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে পুলিশ অমানবিক আচারণ করেছে। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত এখন থেকে যাওয়া হবে না। এসব উগ্র পুলিশের বিচার চাই।
জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড.রইছ উদ্দীন বলেন, সরকারের এই কর্মকাণ্ডে আমরা মর্মাহত। আমার শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালানো হয়েছে। শতাধিক শিক্ষার্থী আহত। পুলিশের এই বিচার করতে হবে।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধিদল ইউজিসিতে যান। কিন্তু ইউজিসি থেকে আশানুরূপ কোনো ঘোষণা না আসায় ‘লংমার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।