শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির বর্ষপূর্তিতে আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভাষণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে। এতে নির্বাচনের একটি প্রাথমিক রোডম্যাপ তুলে ধরার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দেবেন তিনি। নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনের জন্যও বার্তা থাকবে এ ভাষণে। এছাড়াও প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে সরকারের এক বছরের সার্বিক কার্যক্রম তুলে ধরবেন। জানাবেন জুলাই গণহত্যার বিচারের সর্বশেষ অগ্রগতি।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ সরকারের একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আজ প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলেও তা কখন সম্প্রচার হবে- সেটি এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি। আজ বিকাল ৫টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করবেন। এর আগে ভাষণ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। তবে সন্ধ্যার পর তিনি ভাষণ দিতে পারেন বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, ভাষণে সরকারের এক বছরের কর্মকাণ্ড, বিচার ও সংস্কারের উদ্যোগ বিষয়ে বর্ণনার পাশাপাশি নির্বাচনের প্রাথমিক সময়সীমা ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা। এক্ষেত্রে কোন মাসের কোন সময়টিতে নির্বাচন হবে- সেটা জানাবেন। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে- ভাষণে এমনটা উল্লেখ করা হতে পারে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে। তারা জানান, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা বা সুনির্দিষ্ট তারিখ জানানোর বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত।
এদিকে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, তারা ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ভোট গ্রহণের সময় নির্ধারণ করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এক্ষেত্রে ১২ বা ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা আগেই ঘোষণা করেছেন তিনি একটি ইতিহাস সৃষ্টিকারী নির্বাচন করতে চান। তার এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে তিনি ভাষণে রাজনৈতিক দলগুলোকে বার্তা দিতে চান। নির্বাচনে দলগুলোর ভূমিকা কী হওয়া উচিত, তাদের থেকে সরকার কতটা সহযোগিতা প্রত্যাশা করে- সে বিষয়টিও উল্লেখ থাকতে পারে ভাষণে। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দায়িত্বের বিষয়টিও তুলে ধরবেন।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এরপর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। দুদিনের যে কোনো দিন সরকারপ্রধানের জাতির উদ্দেশে ভাষণের পরিকল্পনা ছিল। প্রথমে ৫ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ এবং ৮ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা সরকার গঠনের দিনটিকে গুরুত্ব না দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের দিন ৫ আগস্টই ভাষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের এক কর্মকর্তা বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র ও প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ ৫ আগস্টই হবে। ঘোষণাপত্রের সময় চূড়ান্ত হলেও ভাষণের সময় এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে সেটা রাত ৮টার আগে-পরে হতে পারে। ভাষণে আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা থাকতে পারে। একইসঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, তার বাস্তবায়নের রূপরেখাও থাকতে পারে ভাষণে। তা আজ মঙ্গলবার সকালে চূড়ান্ত হবে।
গত ২৬ জুলাই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ১৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে তিনি জানান, নির্বাচনের তারিখ শিগগিরই ঘোষণা করা হবে। ওই বৈঠক শেষে ১২ দলীয় জোটপ্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্টভাবেই বলেছেন, তিনি আগামী চার থেকে পাঁচদিনের মধ্যে নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়সীমা ও তারিখ ঘোষণা করবেন। তবে ওইদিন রাতে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীরের একটি বক্তব্যে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে অপূর্ব জাহাঙ্গীর দাবি করেন, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। নিজে সে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দাবি করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের বৈঠকে আমি উপস্থিত ছিলাম। সেখানে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে বলে শুনিনি। এটা হয়ত উনি (মোস্তফা জামাল) বাইরে গিয়ে বলেছেন। আমরা সাক্ষী হিসেবে জানি এরকম কোনো আলাপ হয়নি। এই নিউজটি এখনো পর্যন্ত অসত্য।
এদিকে ২৮ জুলাই যমুনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বাচনি প্রস্তুতি-সংক্রান্ত বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদারে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি। এর আগে ৯ জুলাইও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন সরকারপ্রধান।
গত জুন মাসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস লন্ডন সফরে যান। সফরকালে ১৩ জুন তার সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে এক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জনের প্রয়োজন হবে।