জুলাই আন্দোলনে অনেক নিরীহ লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, আমরা চাই কোনো নিরীহ লোক যেন আইনের আওতায় না আসে, এজন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সোমবার ঢাকার কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র (ঢাকা-৩ আসনের ৩নং ভোটকেন্দ্র) পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।
৫ আগস্টের পরে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার অনেক অবনতি হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০ জন মানুষ খুন হয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচনের সময় কোনো বড় শঙ্কা দেখছেন কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, শুধু আমরা নির্বাচনটা চাইছি না, জনগণসহ সবাই চাইছে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য আমাদের যতভাবে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার সেভাবে নেব। অবৈধ অস্ত্রের ক্ষেত্রে আমি গতকালও বলেছি, আমরা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি, উদ্ধারও হচ্ছে। আপনারাও রিপোর্ট করছেন, প্লাস আমরা একটা পুরস্কার ঘোষণার বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছি– যে ইনফরমেশন দিতে পারবে তাকে পুরস্কার দেওয়া হবে।
পুলিশের জন্য বডি ক্যামেরা কেন নেওয়া হচ্ছে– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিটা সেন্টারে আপনারাও দেখতে পারবেন কীভাবে নির্বাচন পরিচালনা হচ্ছে, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হচ্ছে কি না, এটা দেখার জন্য বডি ক্যামেরা দেওয়া হচ্ছে। বডি ক্যামেরা কিন্তু এখনো আমাদের পুলিশের কাছে কিছু আছে, কারারক্ষীদের কাছেও আছে এবং বিজিবির কাছেও আছে। বডি ক্যামেরা যতগুলো আছে, আরও আমরা ৪০ হাজার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা দিয়ে আমরা পুরো ক্যাম্প পরিদর্শন করার ব্যবস্থা করব। আমরা আরও চিন্তা করছি, প্রতিটা থানা হেডকোয়ার্টারে বডি ক্যামেরা দেওয়া যায় কি না। বডি ক্যামেরা দিয়ে কিন্তু সিসি ক্যামেরার মতো অবজারভেশন করা যায়।
প্রতি কেন্দ্রে কি আপনারা আগের মতোই পুলিশ সদস্য রাখবেন নাকি আরও বাড়াবেন– এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, প্রতি কেন্দ্রে ছয়জন পুরুষ আনসার, চারজন মহিলা আনসার ও দুইজন অস্ত্রধারী আনসার থাকে। আমরা এবার প্রিজাইডিং অফিসারের জন্য একজন অস্ত্রধারী আনসার অতিরিক্ত দেব। অনেক সময় প্রিজাইডিং অফিসার হুমকিতে থাকেন। তাছাড়া আরও দুই-তিনজন অস্ত্রধারী পুলিশ থাকবে। এবার আমরা প্রায় ৮০ হাজারের বেশি সেনাবাহিনী সদস্য নিয়োগ করব, বিজিবি থাকবে, নৌবাহিনী থাকবে। কোস্টগার্ড ছাড়াও অন্য বাহিনী থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত তৎপরতা থাকবে। আগেও বলেছি, নির্বাচন পরিপূর্ণ সুষ্ঠু করতে পারবেন যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তারা এবং আপনারা জনগণ। আপনারা সবসময় সত্য ঘটনা প্রকাশ করেন বলে পার্শ্ববর্তী দেশ যে মিথ্যা নিউজ করত সেগুলো এখন বন্ধ হয়ে গেছে। আশা করি আপনারা সবসময় সঠিক নিউজ করবেন।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, জুলাই আন্দোলনে অনেক মামলা হয়েছে নিরীহ লোকদের বিরুদ্ধে। আমরা চাই কোনো নিরীহ লোক যেন আইনের আওতায় না আসে, এজন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখানেও আপনাদের সাহায্য অনেক প্রয়োজন। কিছু টাকার জন্য কিছু নিরীহ লোককে আসামি করেছে। এ বিষয়ে আপনারা জনগণকে সচেতন করবেন। একটা বিষয়, মানুষ অহিংস হয়ে গেছে, একটা ঘটনা ঘটলে কেউ প্রতিবাদ করে না, সবাই ভিডিও করার জন্য ব্যস্ত থাকে। কেউ প্রতিহত করতে আসে না। আগে দেখতাম একটা বাচ্চা পানিতে পড়ে গেলে আরেকজন লাফ দিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করত। এখন দেখবেন সে লাফ না দিয়ে ছবি তোলার জন্য ব্যস্ত হয়ে যাবে। এই সংস্কৃতি থেকে আমাদের সবাইকে বের হয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, যেসব জায়গায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে প্রত্যেক জায়গায় আমরা সবাইকে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি। এখানে শুধু সাংবাদিক না, সাধারণ জনগণের ওপরও যেন হামলা না করতে পারে এজন্য আমাদের সবাইকে প্রতিবাদী হতে হবে। চোখের সমানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সেটা প্রতিহত করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।