রপ্তানিতে বাংলাদেশের সামনে সুবর্ণ সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ
চীন, ভারত, ভিয়েতনামসহ প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কারোপ বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। ফলে মূল্য প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ এখন তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। অর্থনীতিবিদ ও উদ্যোক্তারা মনে করছেন, সুযোগটি কাজে লাগাতে পারলে আগামী পাঁচ বছরে রপ্তানি আয় ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে এজন্য দরকার সঠিক নীতি সহায়তা ও জ্বালানি নিরাপত্তায় জরুরি পদক্ষেপ।
শঙ্কা ও চ্যালেঞ্জ
বিশেষজ্ঞদের মতে, শ্রম অসন্তোষ উসকে দেওয়া, জ্বালানি সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগের অভাব এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থাকায় বাংলাদেশ এই সুবর্ণ সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর উদ্যোক্তাদের নীতি সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির সুযোগ মাথায় রেখে জরুরি সংস্কার শুরু হয়েছে।
ইপিবির উদ্যোগ
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ইতোমধ্যে সরকারকে দ্রুত গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে। সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমেরিকা থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে প্রায় ৮.৭ বিলিয়ন ডলার।
উৎপাদন খরচে বাংলাদেশের বাড়তি সুবিধা
আন্তর্জাতিক জরিপ অনুযায়ী, ১০০টি টি-শার্ট উৎপাদন ও পরিবহনের খরচ বাংলাদেশে মাত্র ৮.৫৫ ডলার, যা চীনে ১৯.৮ ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১২০ ডলার। তুলনামূলকভাবে কম শ্রমিক মজুরি, দক্ষ শ্রমিক বাহিনী ও স্থানীয় কাঁচামালের ব্যবহার বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রেখেছে।
আমেরিকার বাজারে প্রবৃদ্ধি
বিজিএমইএ’র তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-জুনে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ২৫ শতাংশের বেশি, যেখানে চীন ও ভিয়েতনামের প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক। শুধু জুন মাসেই যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৩২ শতাংশ।
জরুরি করণীয়
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহ, গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ, চট্টগ্রাম বন্দরে আলাদা জেটি বরাদ্দ এবং দ্রুত প্রশাসনিক সংস্কার জরুরি। পোশাক শিল্প মালিকরাও শ্রমিক অসন্তোষ ঠেকানোকে প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে দেখছেন।
বন্দর ও অবকাঠামো
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে এনসিটি ও পতেঙ্গা টার্মিনালসহ বেশ কিছু অবকাঠামো উন্নয়ন শুরু হয়েছে। অফডকে পণ্য সরানো ও অকশনযোগ্য কনটেইনার অপসারণের মাধ্যমে বন্দরের সক্ষমতা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
নতুন বিনিয়োগ
চীনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মিরসরাই বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে নতুন করে প্রায় ১৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে। এর মধ্যে পোশাক, ব্যাগ ও হালকা প্রকৌশল পণ্য উৎপাদন হবে।
উপসংহার
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির এ সুযোগ কাজে লাগাতে হলে এখনই শিল্পখাতে জ্বালানি সংকট নিরসন, নীতি সহায়তা এবং শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তা হলে কয়েক বছরের মধ্যেই রপ্তানি আয় শত বিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারবে বাংলাদেশ।