বাম গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। এর আগে ২০১৯ সালে সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনে শামসুন্নাহার হলের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। তবে এবার নিজেদের ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেল ঘোষণার পর পরই সমালোচনার মুখে পড়েছেন ইমি।কারণ ইতোমধ্যে তার একটি বিতর্কিত বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ২০১৯ সালে ডাকসুতে নির্বাচিত হওয়ার পর ইমিকে এক টকশো-তে পতিত স্বৈরশাসক খুনি শেখ হাসিনার প্রশংসায় গদগদ হতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, হাসিনাকে আজীবন ডাকসু সদস্য হিসেবে দেখতে চাওয়ার মনোবাসনা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
এদিকে ইমির বিতর্কিত বক্তব্যকে ঘিরে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেল। সংবাদ সম্মেলনে শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি এবং মেঘমল্লার বসু ডাকসু নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেন।
প্যানেল ঘোষণার পর হাসিনাকে আজীবন ডাকসু সদস্য পদে দেখতে চাওয়ার বক্তব্যের বিষয়ে ইমির মতামত জানতে চান সাংবাদিকরা। কিন্তু ইমিকে এ বিষয়ে কোনো কথাই বলতে দেখা যায়নি। তবে কিছু একটা বলতে চাইলেও ইমিকে থামিয়ে মেঘমল্লার বসু বলেন, এ বিষয়ে আমি কথা বলতে চাই। পর্ষদের সংবাদ সম্মেলনে আজ আমরা এ বিষয়ে কোনো কথা বলব না। সংবাদ সম্মেলনের পর ক্যাম্পাসে এ বিষয়ে ইমি আপাকে আপনারা আলাদা করে প্রশ্ন করতে পারেন।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি, এটা নিয়ে মিডিয়া ন্যারেটিভ উৎপাদন করা হচ্ছে। যারা ২০২৩ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার পক্ষে কথা বলেছে, তাদের কাছে এ জাতীয় প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে চাই না। কাজেই এটাকে আমরা সেন্ট্রাল ইস্যু বানাতে চাই না।
বিতর্কিত বক্তব্যে কী বলেছিলেন ইমি
২০১৯ সালে ডাকসুতে নির্বাচিত হওয়ার পর ইমি এক টকশো-তে জানিয়েছিলেন পতিত স্বৈরাচার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজীবন ডাকসু সদস্য হিসেবে দেখতে চাওয়ার কথা।
সেবার এই প্রস্তাব উত্থিত হওয়ার পর থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিলেন তৎকালীন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর। তবে ইমি নুরের বিরোধিতা করে সায় দিয়েছিলেন হাসিনার আজীবন সদস্য হওয়ার পক্ষে।
একটি বেসরকারি টিভির টকশো-তে এ বিষয়ে কথা বলেন ইমি। সেখানে তিনি ছাড়াও হাজির ছিলেন নুরুল হক নুর ও তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী।
ইমি সেখানে বলেন, ‘আমার হলে যেহেতু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, কয়েক জায়গায় হয়নি এটি আমাকে মানতে হবে, কিন্তু যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী ছিলেন, এবং তাকে যেহেতু আন্তরিক দেখেছি আমরা, ডাকসু নির্বাচনটি যেহেতু সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে, তার আন্তরিকতা ছাড়া কিন্তু এটা সম্ভব ছিল না। তিনি আমাদের গণভবনে ডেকে যে আতিথেয়তা দিয়েছেন, অন্তত কৃতজ্ঞতাবশত হলেও তাকে ডাকসুর আজীবন সদস্য ঘোষণা করা উচিত।’
পরে সে বছরের ৩০ মে ডাকসুর দ্বিতীয় কার্যনির্বাহী সভায় হাসিনাকে আজীবন সদস্য ঘোষণা করা হয়। যে বিবৃতিতে এই ঘোষণা দেওয়া হয়, সেখানে অবশ্য ভিপি নুরের স্বাক্ষর ছিল না। এই সিদ্ধান্তে সমর্থন ছিল না তৎকালীন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক ও বর্তমানে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনেরও।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে ইমি লেখেন, ‘১৯ সালে শেখ হাসিনাকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করার ব্যাপারে আমার বক্তব্যের কিছু খন্ডিত অংশ দেখলাম প্রচার করা হচ্ছে। অনেকেই এই ব্যাপারে আমার বর্তমান অবস্থান জানতে চাচ্ছেন। আমার অবস্থান আমি খুব পরিষ্কারভাবে জানাতে চাই। আমি নিরপরাধ মানুষ এবং ছাত্রখুনের নির্দেশ দাতার সর্বোচ্চ বিচার চাই। ফুলস্টপ।’