আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ ‘ব্লকেড’ করে রেখেছেন বিক্ষোভকারীরা। তবে এই কর্মসূচিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এবং তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেননি বলে জানা গেছে।
এদিকে, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে শাহবাগে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি।
শুক্রবার রাতে হাদি তার ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের বেগম জিয়া, শাহবাগে হাজারো শহীদ পরিবার ও সারা দেশ আপনার অপেক্ষায়।
এর আগে বিএনপির উদ্দেশে একটি পোস্ট দিয়েছেন এনসিপির নেতা সারজিস আলম। ফেসবুক পোস্টে সারজিস লিখেছেন, বিএনপি এবং তার অঙ্গসংগঠন ব্যতীত সকল রাজনৈতিক দল এখন শাহবাগে। বিএনপি আসলে জুলাইয়ের ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায়।
এদিকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত রাজধানীর শাহবাগ ‘ব্লকেড’ করে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আজ শুক্রবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে হাসনাত লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি ছাত্র-জনতার দাবি।
ছাত্র জনতা এবার শাহবাগ অবস্থান নিয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে।’
কিছুক্ষণ পরে আরেক পোস্টে হাসনাত বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি শুধু এনসিপির দাবি নয়। এই দাবি জুলাইয়ের সকল শক্তির দাবি।
এই সমাবেশ জুলাইয়ের সকল শক্তির সমাবেশ।
এর আগে শুক্রবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার পাশে মিন্টো রোডের ফোয়ারার সামনের সমাবেশ থেকেও একই ঘোষণা দেন তিনি। ঘোষণার পর সমাবেশ থেকে হাসনাত আব্দুল্লাহ নেতৃত্বে সাধারণ ছাত্র জনতার একটি মিছিল শাহবাগের দিকে যায়। এবং শাহবাগ ব্লগেট করে রাখেন।
সমাবেশে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ইন্টিরেম সরকার আমাদের দাবি মানে নাই। তাদের কানে আমাদের দাবি পৌঁছে নেই। তাই আমরা ব্লকেট দিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি বাস্তবায়ন করে ছাড়বো। আজ থেকে যতদিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণা না আসবে ততদিন পর্যন্ত শাহবাগ ব্লকেট থাকবে।’
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে রাজধানীর শাহবাগ মোড়। আজ শুক্রবার (৯ মে) বিকেলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পার্শ্ববর্তী সড়ক থেকে সমাবেশ শেষে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করলে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এদিন বিকেল সাড়ে চারটার পর থেকেই জামায়াত-শিবির, হেফাজতে ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ছাত্র-জনতা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিতে শুরু করেন। তাদের কণ্ঠে ছিল আওয়ামী লীগ বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান।
তার মধ্যে ‘ব্যান করো ব্যান করো, আওয়ামী লীগ ব্যান করো’, ‘দিল্লি না, ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘গোলামি না আজাদী, আজাদী আজাদী’ ‘নাহিদ, আক্তার আসছে, রাজপথ কাঁপছে’, ‘একটা একটা ছাত্রলীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর’, ‘আওয়ামী লীগের আস্তানা, ভেঙে দাও ঘুরিয়ে দাও’, ‘২৪ বাংলায়, আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, প্রভৃতি বলে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে।
এই অবরোধে যেন ফিরে এসেছে ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ের উত্তাল দিনগুলো, যা ‘জুলাই আন্দোলন’ নামে পরিচিত।
গত বুধবার রাতে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দেশ ছাড়ার খবরে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা। বুধবার দিবাগত রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের টিজি ৩৪০ নম্বর ফ্লাইটে ব্যাঙ্ককের উদ্দেশ্যে আবদুল হামিদ ঢাকা ছাড়েন বলে জানা যায়।