আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ছিল গণভবন। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় বিক্ষুব্ধ জনতা সেখানে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালালে ভবনটি অকার্যকর হয়ে যায়। পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে রূপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
এখন জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার ভেতরেই তৈরি হচ্ছে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন। এর অংশ হিসেবে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের জন্য নির্মিত দুটি পাশাপাশি ভবন একীভূত করে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুটি ভবনের মধ্যে যাতায়াতের সুবিধার্থে নির্মিত হবে দুই তলাবিশিষ্ট একটি করিডর।
বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বসবাস করছেন। তবে ভবিষ্যতের জন্য স্থায়ী সমাধান খুঁজতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কমিটি কাজ করছে। শুরুতে যমুনা ভবন ও হেয়ার রোডের বাংলোগুলো নিয়ে আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত সংসদ এলাকার দুটি ভবনকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
সম্প্রতি গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব নজরুল ইসলাম, সংসদ সচিবালয়ের সচিব কানিজ মওলা, প্রধান উপদেষ্টার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল ফেরদৌস হাসান এবং এসএসএফ মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুব উস সামাদসহ একটি প্রতিনিধি দল ভবন দুটি পরিদর্শন করেন। নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরাও কয়েক দফা সেখানে ঘুরে দেখেছেন।
২০০২ সালে চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে নির্মিত এই দুটি লাল ইটের দোতলা ভবন নিয়ে লুই আই কানের নকশা বিকৃতির অভিযোগ ওঠে। হাইকোর্ট এগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করলেও ২০২২ সালে আপিল বিভাগ সেই রায় বাতিল করে। সর্বশেষ এগুলোতে বসবাস করছিলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু।
আসাদ গেট সংলগ্ন সংসদ ভবনের পশ্চিম পাশে অবস্থিত দুটি ভবন একই আদলে নির্মিত, চারপাশে সীমানাপ্রাচীর, সামনের খোলা জায়গা ও বাগানসহ।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় গণভবন নির্মিত হলেও তিনি সেখানে থাকেননি। ১৯৮৫ সালে এরশাদের শাসনামলে ভবনটি ‘করতোয়া’ নামে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে পুনরায় এটিকে গণভবন নামে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন বানান। খালেদা জিয়া কখনো সেখানে থাকেননি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর গণভবন সংস্কার করা হয় এবং ২০১০ সালের মার্চে শেখ হাসিনা সেখানে ওঠেন। তিনি ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন।
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ মনে করেন, জাতীয় সংসদ ভবন বিশ্বের অন্যতম আধুনিক স্থাপত্যের নিদর্শন। এর নকশায় কোনো ব্যত্যয় ঘটলে স্থাপত্যিক গৌরব ক্ষুণ্ণ হতে পারে। তিনি এটি বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, নতুন বাসভবনের জন্য বড় কোনো ব্যয় হবে না। দুটি ভবনের সংযোগ স্থাপন ও নিরাপত্তা জোরদার করলেই প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন হিসেবে ব্যবহার উপযোগী হবে। প্রয়োজনে এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন হিসেবেও কাজে লাগানো সম্ভব।