বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (বরখাস্ত) মো. মুজিবুর রহমান ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. আকবর হোসেন বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন বলে বিভিন্ন কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা সূত্রে জানা গেছে। তারা সপরিবারে কলকাতায় অবস্থান করছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
সূত্রগুলোর মতে, দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার অভিযোগ রয়েছে এ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, অতীতে বাংলাদেশে ঘটা কিছু মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ঘিরে বিতর্ক রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দিক থেকে সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এভাবে বিদেশে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক। তারা এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্তের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
জেনারেল মুজিবের বিষয়ে পাওয়া তথ্য:
নিরাপত্তা সূত্র অনুসারে, বরখাস্তকৃত লে. জেনারেল মো. মুজিবুর রহমান তার পরিবারসহ কলকাতায় অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অবস্থানকালে ক্ষমতার অপব্যবহার, গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘন, এবং বিতর্কিত আইন প্রয়োগকারী কার্যক্রমের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনা, র্যাবের সময়কালে গুম-ক্রসফায়ারসহ বিভিন্ন ঘটনায় তার ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
দুর্নীতির অভিযোগে তার ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলাও চলমান রয়েছে। এই মামলার ভিত্তিতে আদালতের আদেশে তাদের একাধিক ব্যাংক হিসাব ও সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।
জেনারেল আকবরের ভূমিকা:
অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. আকবর হোসেন সেনাবাহিনীর ১৩তম লং কোর্সের সদস্য এবং ডিজিএফআই-এর সাবেক প্রধান ছিলেন। তার বিরুদ্ধেও ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে ভূমিকা রাখার অভিযোগ রয়েছে।
তাকে ঘিরে অভিযোগ রয়েছে, সাবেক বিচারপতি এস.কে. সিনহা প্রবাসে যেতে বাধ্য হওয়ার ঘটনাতেও তিনি জড়িত ছিলেন। এছাড়া ভারতীয় সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথাও একাধিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
ভারতে অবস্থান ও গোয়েন্দা তথ্য:
একাধিক সূত্রের দাবি অনুযায়ী, ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (IB) বাংলাদেশের সাবেক সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তাদের একটি ডেটাবেইস তৈরি করেছে, যাতে ৭০০ জনেরও বেশি ব্যক্তির তথ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে দুই জেনারেলের পাসপোর্ট নম্বর, ফোন নম্বর ও পরিবারের সদস্যদের তথ্যও নথিভুক্ত রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতামত:
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহ এই ঘটনাকে “জাতীয় নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক” বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত বিষয়টি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরা এবং যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে পদক্ষেপ নেওয়া।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এম. মুনিরুজ্জামান বলেন, “যদি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থেকে থাকে, তাহলে তাদের আইনের আওতায় আনার প্রয়োজন রয়েছে। এর আগে তাদের অবস্থান ও তৎপরতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।”
সরকারি প্রতিক্রিয়া:
আইএসপিআর-এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি-উদ-দৌলা চৌধুরী জানিয়েছেন, দুই জেনারেলের ভারতে অবস্থান সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।