বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চল পরিচালক মাওলানা আবদুল হালিম বলেছেন, সকল ঈমানি দল ও শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য গড়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে জামায়াতে ইসলামি।
মঙ্গলবার নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসনের দায়িত্বশীলদের নিয়ে সৈয়দপুর পৌর কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, গত ৫৪ বছরে যারা দেশ শাসন করেছে, তারা ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আগামীতে সকল বিভেদ ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে—যেখানে ধর্ম-বর্ণের ভিত্তিতে মানুষকে আর বিভাজন করা হবে না।
তিনি বলেন, জামায়াতের কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কখনো দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। জামায়াত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে দেশের মালিক নয়, জনগণের সেবক হিসেবেই কাজ করবে। ক্ষমতাকে কখনো ব্যক্তিগত স্বার্থ বা অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে না। ৫৪ বছরে জামায়াতের হাতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের একটিও ঘটনা ঘটেনি। আমরা এমন একটি সম্প্রীতির বাংলাদেশ চাই, যেখানে সকল নাগরিকের অধিকার নিরাপদ থাকবে।
আওয়ামী লীগের মধ্যে এখনও অনুশোচনার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে এবং বিদেশেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই—ফ্যাসিবাদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জনগণের আশঙ্কা—সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে তা হবে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি। সেই তিন নির্বাচনে প্রায় ৪ কোটি তরুণ ভোট দিতে পারেনি। আমরা এমন একটি নির্বাচনী পরিবেশ চাই যেখানে সবাই উৎসবমুখরভাবে ভোট দিতে পারবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সেখানে শতভাগ স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে, যেখানে ৮০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন—এটি দেশের ইতিহাসে দৃষ্টান্ত। জাতীয় নির্বাচনও সেই আদলে হতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মাওলানা হালিম জানান, জামায়াতসহ ছয়টি রাজনৈতিক দল পিআরসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে মনোনয়ন বাণিজ্য ও একচেটিয়াতার সুযোগ থাকবে না। এতে দল, দেশ ও রাজনীতির জন্য স্থিতিশীলতা আসবে। এই পদ্ধতির অন্যতম সুফল হলো—কেউ ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে পারবে না। তাই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে আগামীর নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত করতে হবে।
নীলফামারী-৪ আসনের পরিচালক আখতারুজ্জামান বাদলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চল টিম সদস্য মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ, নীলফামারী জেলা আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার, জেলা নায়েবে আমীর ড. খায়রুল আনাম, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আন্তাজুল ইসলাম এবং আসনের প্রার্থী ও সৈয়দপুর উপজেলা আমীর হাফেজ আব্দুল মুনতাকিম।
এছাড়া জেলা কর্মপরিষদ সদস্য প্রভাষক ছাদের হোসেন, প্রভাষক আব্দুল কাদিম ও প্রভাষক মনিরুজ্জামান জুয়েল বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন সৈয়দপুর উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মো. শফিকুল ইসলাম, সেক্রেটারি মাযহারুল ইসলাম, শহর আমীর মো. শরফুদ্দিন খান, শহর সেক্রেটারি ওয়াজেদ আলীসহ অন্য নেতৃবৃন্দ।