১৫৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও ৯৬৯ কোটি টাকার সন্দেহভাজন লেনদেনের অভিযোগে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জুয়েলার্স সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (তদন্ত) আক্তার হোসেন এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দিলীপ কুমার আগারওয়ালা অসাধু উপায়ে ১১২ কোটি ৪৭ লাখ ২৮ হাজার ৪০৭ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়াও তার নামে থাকা ৩৪টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৭৫৫ কোটি ৩০ লাখ ৫৬ হাজার ২৬৩ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন শনাক্ত করা হয়েছে। এসব লেনদেনের অর্থ তিনি হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে আয়ের প্রকৃত উৎস আড়াল করেছেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা তৎসহ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা অনুযায়ী মামলা রুজুর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, অন্যদিকে দিলীপ কুমার আগারওয়ালার স্ত্রী সবিতা আগারওয়ালা জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৪৫ কোটি ৭০ লাখ ৬৭ হাজার ২৮৭ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন ও দখলে রেখেছেন। পাশাপাশি ৮টি ব্যাংক হিসাবে ২১৩ কোটি ২৮ লাখ ৭৩ হাজার ৯২৭ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধেও একই ধারায় মামলা রুজুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দিলীপ কুমার আগারওয়ালাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও জানান, এছাড়া বাজুসের সাবেক সভাপতি এনামুল হক খান ২ কোটি ৪৭ লাখ ৬২ হাজার ৬৫১ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন এবং ১২টি ব্যাংক হিসাবে ১৪৪ কোটি ৪৭ লাখ ৩৪ হাজার ২৪২ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন বলে দুদকের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। তার স্ত্রী শারমিন খানের বিরুদ্ধে ৭ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার ৯৬৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ৭টি ব্যাংক হিসাবে ৫ কোটি ২২ লাখ ৯০ হাজার ১৬৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা অনুসারে অভিযোগ আনা হয়েছে। ডায়মন্ড অ্যান্ড ডাইভার্স ও শারমিন জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী এনামুল ২০২৩ সালে বাজুস থেকে বহিষ্কৃত হন।
উল্লেখ্য, দিলীপ বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির (বাজুস) সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বিতর্কিত জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অস্বাভাবিক হারে সম্পদ গড়ে তোলা বিতর্কিত এই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তিন দফা অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছিল দুদক। প্রতিবারই তিনি প্রভাব খাটিয়ে অভিযোগ থেকে রেহাই পান। তবে জুলাই বিপ্লবের পর গুলশান থেকে র্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর দুদক তার বিরুদ্ধে নতুন করে অনুসন্ধান শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে তার নামে মামলা দায়ের হলো।