জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রাকিব। গুলি তার বুক দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। সবাই ভেবেছিলেন তিনি মারা গেছেন। তবুও কয়েকজন তাকে নিয়ে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। এ খবর বাড়ি পৌঁছানোর পর কান্নার রোল পড়ে যায়।
এরই মাঝে খবর আসে তিনি বেঁচে আছেন। সে সময় এই শ্রমিকের খোঁজখবর নিতে অনেকেই হাসপাতালে এসেছিলেন, বলেছিলেন সাহায্য-সহযোগিতার কথাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খোঁজ রাখেননি কেউই। এখন অর্থাভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে তার পরিবার।
জানা গেছে, রাকিব মোল্যার বাড়ি ফরিদপুরের সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের চরবাংরাইল মোল্যাপাড়া এলাকায়। তিনি ভ্যানচালক হান্নান মোল্যার বড় ছেলে। কাজ করতেন একটি মোটরসাইকেল গ্যারেজে। টিভিতে আন্দোলনের খবর দেখে ২০ জুলাই তিনিও যোগ দেন ছাত্র-জনতার সঙ্গে যাত্রাবাড়ী এলাকায়। সেখানেই গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
গুলিবিদ্ধ রাকিব মোল্যা জানান, ঢাকার যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া এলাকায় থাকতেন তিনি। সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুপুত্রকে দেখতে ফরিদপুর গিয়েছিলেন। ৯ দিনের ছোট্ট ছেলেকে বাড়িতে রেখে দুদিন পর কাজের জন্য আবারও ঢাকায় ফেরেন। কারফিউতে দুদিন আটকা থাকেন বাসায়। এরপর টিভিতে আন্দোলনের খবর দেখে ২০ জুলাই তিনিও যোগ দেন ছাত্র-জনতার সঙ্গে। ওই সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন, পড়ে থাকেন রাস্তায়। পরে সহযোদ্ধারা তাকে ঢামেক হাসপাতালে নেন।
আরো জানা গেছে, সেদিন বিকাল ৫টার পর রাকিবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে রাখা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে কিছুটা সুস্থ হন তিনি। দীর্ঘ পাঁচ মাস চিকিৎসা শেষে চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি গ্রামের বাড়ি আসেন রাকিব। আহত রাকিবকে দেখতে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও তৎকালীন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম হাসপাতালে যান। এ ছাড়াও সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সার্জিস আলম এবং বিজিবি কর্মকর্তারা তাকে দেখতে যান। তখন অনেকেই সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও পরে আর কেউ খোঁজখবর নেননি।
রাকিব জানান, গ্রামের বাড়িতে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। কোনো কাজ করতে পারেন না। হাত দিয়ে ভারী কিছু তুললে মনে হয় বুকের ভেতরে দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে সবকিছু। শিশুপুত্র রাফসান মোল্যার বয়স এখন ১০ মাস। বাচ্চার খাবার, তার ওষুধ কেনা এবং সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন ভ্যানচালক বাবা।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয়রা খোঁজখবর নিলেও তেমন কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারেন না। আহত রাকিব তার শিশুপুত্রকে কোলেও নিতে পারেন না। তারপরও মায়া করে মাঝেমধ্যে কোলে নিলে বুকে তীব্র ব্যথা হয়।
রাকিব বলেন, বাবা হয়েছি কিন্তু বাবার কোনো কর্তব্য পালন করতে পারিনি। এক সময় পরিবারের হাল ধরলেও এখন পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে গেছি।