ঢাকঢোল পিটিয়ে, বিপুল আয়োজন ও কোটি টাকার ব্যয়ে রাজধানী দিল্লির দূষণ কমাতে কৃত্রিম বৃষ্টি ঘটানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সেটি ব্যর্থ হয়েছে। মেঘের মধ্যে রাসায়নিক ছড়িয়ে বৃষ্টি ঝরানোর চেষ্টা চালানো হয়, কিন্তু রাজধানীর আকাশ থেকে একফোঁটা বৃষ্টিও পড়েনি।
এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ২১ লাখ রুপি। দিল্লির বিজেপি সরকারের তত্ত্বাবধানে কানপুর আইআইটি এই কাজটি পরিচালনা করে। তবে আইআইটির দাবি, বৃষ্টি না হলেও তারা বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছে।
গত মঙ্গলবার কানপুর আইআইটির একটি সেসনা উড়োজাহাজ দিল্লির আকাশে দুই দফায় উড়ে মেঘে ছিটায় ড্রাই আইস, সিলভার আয়োডাইড, আয়োডাইজড লবণ ও রক সল্ট। পরিকল্পনা ছিল, এসব রাসায়নিক মেঘে জলকণা সৃষ্টি করবে এবং বৃষ্টি ঝরবে। কিন্তু দিনের শেষ পর্যন্ত দিল্লিতে বৃষ্টির কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। শুধুমাত্র উপকণ্ঠ নয়ডায় অতি অল্প পরিমাণ—০.১ মিলিলিটার—বৃষ্টি হয়।
কানপুর আইআইটির পরিচালক মনীন্দ্র আগরওয়াল এনডিটিভিকে বলেন, দিল্লির বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ, যা বৃষ্টির জন্য যথেষ্ট নয়। তিনি জানান, প্রকল্পটি পুরোপুরি ব্যর্থ নয়; পরীক্ষার মাধ্যমে তারা মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করেছেন এবং বাতাসে থাকা পিএম ২.৫ দূষণকণার পরিমাণ ৬ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃত্রিম বৃষ্টি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। দিল্লির দূষণ রোধে প্রয়োজন দূষণের মূল উৎস বন্ধ করা। দীপাবলির সময় বাজি পোড়ানো, ফসলের গোড়া পোড়ানো, নির্মাণকাজের ধুলা ও কলকারখানার বর্জ্যই দূষণের প্রধান উৎস বলে তারা উল্লেখ করেছেন।
বিগত আম আদমি পার্টি সরকার ‘গ্রিন ক্র্যাকার’ চালুর মাধ্যমে কিছুটা উদ্যোগ নিলেও বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসে তা গুরুত্ব দেয়নি। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর চাপে বাজি পোড়ানো বন্ধের উদ্যোগও ব্যর্থ হয়। ফলে প্রতি বছর দীপাবলির পর দিল্লি আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে ঘন ধোঁয়ার চাদরে।
চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও পাকিস্তানে কৃত্রিম বৃষ্টি কিছুটা সফল হলেও, বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিয়েছেন—এই পদ্ধতি ব্যয়সাপেক্ষ এবং এর প্রভাব টেকে মাত্র কয়েক দিন। ফলে দূষণ সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয় এটি।
